বাংলাদেশে ফোর জি সেবা কতটা পাচ্ছেন গ্রাহকরা?
মোবাইল ফোন অপারেটররা ফোর-জি চালু করেছে। সরকার এ লাইসেন্স দিয়েছে সম্প্রতি। ঢাকার অনেক স্থানেই ফোরজি নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন অপারেটররা ফোর-জি সেবা চালু করলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন অনেক গ্রাহক। অনেক স্থানেই ফোর-জি নেটওয়ার্ক না থাকা কিংবা থাকলেও তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তবে মোবাইল অপারেটররা বলছে, এই সমস্যা সাময়িক।
বাংলাদেশে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি আনুঠানিকভাবে চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বা ফোর-জি সেবা চালু করে ৩টি মোবাইল ফোন অপারেটর। এ নিয়ে গ্রাহকদের অবহিত করতে নানারকম বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক। কিন্তু বাস্তবে গ্রাহকরা কতটা পাচ্ছেন এই সেবা?
ফোরজি চালুর শুরু থেকেই দেশের ৬৪টি জেলার শহরগুলোতে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে বলে ঘোষণা দেয় রবি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ শহরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে এখনো রবির ফোর-জি নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় রবির কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে ফোর-জি সিম নিতে এসেছেন জাহাঙ্গীর আলম। নতুন সিম সংগ্রহ করার পর সেটি তিনি তার ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেটে প্রবেশ করালেও ফোরজি নেটওয়ার্ক পাচ্ছিলেন না।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জে ফোর-জি চালু হয়েছে এরকম ঘোষণা শুনেই সিম কিনলাম। কিন্তু নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না। কাস্টমার কেয়ারের লোকজন বলছে আপাতত: থ্রিজিতেই চালাতে হবে। আরেকজন গ্রাহক বলছিলেন, এইখানে তো ফোর-জি ফেইল করছে, নেটওয়ার্ক শো করে না। থ্রিজির মতোই ভিডিও দেখতে গেলে আটকে যাচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে গ্রামীনফোন ও বাংলালিংকের সিম চালু করে দেখা যায় সেখানেও ফোর-জি নেটওয়ার্ক নেই। তবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন স্থানে ফোর-জি নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন গ্রাহকদের কেউ কেউ। প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির শুরু থেকেই ব্যবহার করছেন ফোর-জি সিম। জানতে চেয়েছিলাম এই সেবা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা কেমন?
তিনি বলছিলেন, ধানমন্ডিতে গ্রামীনফোনের ফোরজি নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। তবে রবির নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। গুলশানে আমার অফিসে সবগুলো অপারেটরেরই ফোর-জি নেটওয়ার্ক পাচ্ছি। কিন্তু সেখানে কানেক্ট করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সিগন্যাল চলে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে এর আগে চালু হওয়া থ্রিজি নেটওয়ার্ক নিয়েও কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করে থাকেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। এবার ফোর-জি সেবা চালু হলেও তা ঠিকমতো কাজ না করায় এ নিয়ে আশংকার মধ্যে অনেকেই। তবে মোবাইল অপারেটররা বলছেন, শুরুর এই সমস্যা পরে থাকবে না।
গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান বলছিলেন, বিভাগীয় শহরগুলোতে আমরা ফোর-জি চালু করেছি। এটা কিন্তু এখনি শতভাগ পুরোটা কাভার করছে না। এখানে আমরা একটা প্ল্যানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ডিভিশনাল শহরগুলোতে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, তার আগেই আমরা শতভাগ নেটওয়ার্ক কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসবো।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ফোর-জি সেবা চালুর জন্য ৯ মাস সময় পাবে মোবাইল অপারেটররা। সারাদেশে এর বিস্তৃতির জন্য সময় দেয়া আছে ৩ বছর। কিন্তু মোবাইল অপারেটর রবি নিজেদের উদ্যোগেই বিভাগীয় শহরগুলোর বাইরে জেলাশহরে ফোর-জি নেটওয়ার্ক চালুর ঘোষণা দিচ্ছে। যদিও সেই নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
রবি’র হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স সাহেদ আলম বলছিলেন, ফোর-জি তো একটা টেকনোলজি। তাই শুরুতে একটু সমস্যা হতেই পারে। আমরা গ্রাহকদের বলবো একটু ধৈর্য ধরতে। প্রথম দিন থেকে দ্বিতীয় দিনে আমরা ২০ শতাংশ এলাকায় নেটওয়ার্ক দিতে পেরেছি। এই মাসের মধ্যেই আমাদের আরো দুই হাজারের বেশি সাইট চালু হয়ে যাবে। তখন সমস্যা অনেক কমে যাবে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, ফোর-জি চালুর জন্য যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি নেই মোবাইল অপারেটরদের কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির মনে করছেন, ফোরজি চালুর আগে মোবাইল অপারেটরদের যথেষ্ট প্রস্তুতি না থাকাতেই ভোগান্তিতে পড়ছেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা।
লাইসেন্স পাওয়ার আগে মোবাইল অপারেটরদের যেরকম প্রস্তুতি নেয়া দরকার ছিলো, তারা সেটা নেননি। লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকেই উনারা শুরু করেছেন। ফোর-জি উপযোগী করে নেটওয়ার্ক সাইটগুলো তৈরি করা, কানেক্টিভিটি তৈরি করা -এসব কাজ তারা আগে করেনি।
মোবাইল অপারেটররা বলছেন, বাংলাদেশে ফোর-জি সেবা চালু হলে নিরবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক, ভিডিও ডাউনলোড, লাইভ স্ট্রিমিং সহ নানারকম সেবা পাবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এর জন্য মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটে যে ধরণের গতি দরকার তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কথা বলছে না মোবাইল অপারেটররা।
বিশ্বে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গড় গতি ১৬ এমবিপিএসের উপরে। বাংলাদেশে তা কত হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ধারণা দিচ্ছে না মোবাইল অপারেটররা। বাংলাদেশে বর্তমানে থ্রিজির গড় গতি ৪ এমবিপিএসের নিচে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগনালের তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গড় গতি ১৬ এমবিপিএসের উপরে।
বাংলাদেশে সেটা কত হবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা নেই কোন পক্ষেরই। শুধু বলা হচ্ছে, থ্রিজির চেয়ে অনেক গতিময় হবে এই সেবা। ওপেন সিগনালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে থ্রিজির গড় গতি হচ্ছে, ৩.৭৫ এমবিপিএস।
বিটিআরসি বলছে, গ্রাহকরা যেন ইন্টারনেটে যথেষ্ট গতি পান তা নিশ্চিত করা হবে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলছেন, ফোর-জি সেবা গ্রাহকরা কতটা পাচ্ছেন তা মনিটর করা হবে। এখানে ইন্টারনেটের গতি থ্রিজির চেয়ে অনেক ভালো হবে। কিন্তু গতি কত হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। নেটওয়ার্কের অবস্থা, গ্রাহকের সংখ্যা, তরঙ্গ সবকিছিু বিবেচনা করে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা একটা ন্যূনতম গতি নির্ধারণ করবো। এটা সময়ে সময়ে পরিবর্তনও হতে পারে।
বিটিআরসি বলছে, ফোর-জি নেটওয়ার্কে যে সমস্যা হচ্ছে, তার জন্য এখনি মোবাইল অপারেটরদের দায়ী করতে পারবেন না তারা। তবে সেবা চালুর জন্য যে সময় বেঁধে দেয়া আছে অপারেটরদের, সে সময়সীমা পার হলেও যদি কাঙ্খিত সেবা না মেলে তবে অভিযুক্ত অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র:বিবিসি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন