ধর্মান্তরিত, বিয়ে ও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল কামরুল-দীপা

বিশেষ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের বেশ কিছু নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জঙ্গিদের ওপর এই হত্যাকাণ্ডের দায়ভার গড়াবে এমনটাই ভেবে রথীশ চন্দ্রকে হত্যার পর তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিককে নিয়ে গোপনে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল প্রেমিক কামরুল ইসলাম। এ জন্য তারা প্রাথমিক প্রস্তুতিসহ সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পালিয়ে যাবার সাহস পাননি শিক্ষকজুটি দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম জাফরী।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মূলত বছরখানেক আগেই কামরুলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে দীপা ভৌমিক। মাঝে মাঝে কামরুল প্রেমিকা দীপার সঙ্গে রাত কাটাতো। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দীপা ভৌমিককে ধর্মান্তরিত হওয়ার এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয় কামরুল। দীপা ভৌমিক সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে পরকীয়া চালিয়ে যান। আর তাদের পরকীয়ায় যেন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে না পারেন সেজন্য ২ মাস আগে রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে হত্যার পরিকল্পনা করেন কামরুল ও দীপা।

ওই সূত্র থেকে জানা গেছে, রথীশ এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে এতটাই সম্পর্ক খারাপ ছিল যে দুজনে একই ঘরে থাকলেও তাদের মধ্যে খুব বেশি কথা হতো না। রথীশ চন্দ্র পরকীয়ায় জড়িয়েছে এমন সন্দেহ ছিল দীপা ভৌমিকের মনে। এ নিয়ে প্রায়ই উভয়ের মধ্যে উচ্চবাক্য হতো। এরকম বিভিন্ন কারণে রথীশ চন্দ্র সংসার চালানোর খরচও দিতে চাইতো না দীপাকে। স্বামীর টাকা-পয়সা, সম্পত্তি, কোথায় কী আছে তারও কোনো খোঁজ পেত না স্ত্রী। এতে অতীষ্ঠ হয়ে সহকর্মী কামরুলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন দীপা ভৌমিক। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কামরুল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মেঝে খুঁড়ে রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে বুধবার দুপুরে র‌্যাবের মহাপরিচালক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্ত্রী দীপা ভৌমিক জানিয়েছেন পরকীয়া প্রেম, পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও অশান্তি থেকেই স্বামী বাবু সোনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। হত্যার পরিকল্পনা করা হয় দুই মাস আগে থেকে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে ভাত ও দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে বাবু সোনাকে হত্যা করে ঘরের আলমিরাতে রেখে দেন। পরে তিনি ও তার প্রেমিক তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল ইসলাম পূর্ব পরিকল্পনা মতে লাশটি গুম করে রাখেন।

র‌্যাব প্রধান বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ মার্চ শিক্ষক কামরুল ইসলামের নির্দেশে ৩০০ টাকার বিনিময়ে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মেল্লাপাড়ার রবিউল ইসলামের ছেলে সবুজ ইসলাম ও রফিকুল ইসলামের ছেলে রোকনুজ্জামান গর্ত খুঁড়ে রাখেন। পরে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কামরুলের নির্দেশে গর্তের আংশিক ভরাট কাজে তাকে সহায়তা করে ওই দুই শিক্ষার্থী। ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করে কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর ৬ দিন পর প্রেমিক কামরুল মাষ্টার ও দীপা ভৌমিক মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে রহস্যের জট ভেদ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।