প্রজ্ঞাপন জারি : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়

সব সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল হবে নাকি কেবল বিসিএসে কোটা বাতিল হবে, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আসার পর প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কোটা সংস্কারের দাবিতে তুমুল আন্দোলনের মুখে বুধবার প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করে দেয়ার কথা বলেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর তার বক্তব্যে উদাহরণ দিয়েছেন কেবল বিসিএসের।

কাজেই এই সিদ্ধান্ত কেবল বিসিএস নাকি প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সব চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

আবার প্রধানমন্ত্রী কোটা থাকার দরকার নাই বলে নিজের মত দিলেও এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কাজেই তাদের প্রতিবেদনেরও গুরুত্ব রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান।

কোটা সংস্কার হবে নাকি বাতিল হবে- এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশনার সময় তা বলা যাবে। এখনই এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেন সংস্কার বা বাতিল যেটাই হোক সেভাবেই হবে।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। …বিসিএস না প্রথম গ্রেড না দ্বিতীয় গ্রেডের জন্য তা বোঝা যাবে প্রজ্ঞাপন হওয়ার পর।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা প্রজ্ঞাপন জারি অবধি তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরেছে।

কবে হবে প্রজ্ঞাপন?-এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘এটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। এখনই কোনও নিয়োগ হচ্ছে না। তাতে রাষ্ট্রেরও কোনও ক্ষতি হচ্ছে না।’

‘আমাদের পরবর্তী কাজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়া। অনেকেই এ বিষয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। এটি অত সহজ বিষয় নয়। কিছুটা জটিলও। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর সবকিছুই কেটে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে তার বক্তব্যে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার বিষয়েও কথা বলেছেন। এটি কীভাবে হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা পুরো বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই প্রজ্ঞাপন হবে।’

এর আগে সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ‘সেই প্রজ্ঞাপনে কী থাকবে, প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিষয়টি কীভাবে থাকবে সেটি জানা যাবে এ সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর তারা যেভাবে বলবেন তার ওপর। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘উনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা। ওনার নির্দেশনা মাথায় রাখুন।’

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সরকারি চাকরি নিয়োগের ৮০ শতাংশই হতো কোটায়। তবে সবশেষ নীতিমালা অনুযায়ী কোটায় পদ ছিল ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে ৯০ দশকে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের অনুসারীরা শুরুতে দাবি তুলেছিল। পরে নানা নামে একাধিকবার এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। তবে সম্প্রতি কোটা নিয়ে আন্দোলন হয় সংস্কারের নামে। সেখানে কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তোলা হয়।

এর মধ্যে বিএনপিপন্থী আসিফ নজরুল একটি টেলিভিশনে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা ‘কোটার’ প্রতিই প্রধান ‘রাগ’ ছিল আন্দোলনকারীদের।

এমনকি সরকারি চাকরিতে অনাগ্রহী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে শহর স্থবির করে তোলে। ঢাকার বাইরেও সড়ক বন্ধ করে অচল করে দেয়া হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই আন্দোলনে বিএনপিও যে জড়িয়ে পড়েছিল সে বিষয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি টেলিফোনালাপও প্রকাশ হয়েছে।

আর বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কার করতে গেলে, কয়দিন পর আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই হবে সংস্কার। আর না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই।’