বর্ষবরণে রাজধানীতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা
মুখে না বললেও বর্ষবরণের আয়োজনে নিরাপত্তার কড়াড়িতে স্পষ্ট যে কিছু উদ্বেগ থাকলেও থাকতে পারে। ভোর থেকে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভোর থেকে দেখা গেছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা।
সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে সূরের মূর্ছনায় নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের করা মঙ্গল শোভযাত্রাকে ঘিরে নিরাপত্তার ব্যাপক আয়োজনও দেখা গেছে।
এই আয়োজনকে হারাম ঘোষণা করে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে তাদের হুঁশিয়ারি গায়ে না মেখে লাখো মানুষ ‘সোনার মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়ে অংশ নিয়েছে এই আয়োজনে।
প্রতি বছর মঙ্গল শোভযাত্রায় আলাদা প্রতিপাদ্য গ্রহণ করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ফকির লালন সাঁইয়ের বিখ্যাত গানের কলি ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’
এই শোভযাত্রার সামনে ছিল কয়েক সারি র্যাবের সশস্ত্র দল। তারও আগে ছিল পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল ঘুরে আবার শোভাযাত্রা শেষ হয় টিএসসি এলাকায়। তবে এতে মানুষের সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে শোভযাত্রার শেষ প্রান্ত আবার ঘুরে টিএসসি এলাকায় আসতে পারেনি। কারণ সড়কে অত জায়গা ছিল না।’
কেবল শোভযাত্রার আগে বা পরে নয়, সড়কের দুই পাশও পুলিশ ঘিরে রেখেছিল সশস্ত্র পাহারায়। মিছিলে মাঝপথে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি, কাউকে বের হতেও দেয়া হয়নি। কেউ মুখোশ পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেনি।
এর আগে ভোরে ও সকালে উদ্যান ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশে অন্তত পাঁচ জায়গায় পড়তে হয়েছে তল্লাশিতে। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরে তল্লাশির পাশাপাশি আর্চওয়ের সবুজ সংকেতের পরই ঢুকতে পেরেছে মানুষ। ব্যাগ নিতে দেয়া হয়নি কাউকেই।
পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও শত শত নিরাপত্তকর্মী উপস্থিত রয়েছেন। কাজ করছে ডগ স্কোয়াড এবং বোমা ডিসপোজাল দলও দায়িত্ব পালন করছে। পুরো এলাকাই সিসি টিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আছে বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ারও। উৎসব এলাকায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ আলাদা।
এবার নতুন এক ধরনের উদ্যোগও রয়েছে। নারী হয়রানি এবং ধূমপান রোধে কাজ করছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতও।
তবে নববর্ষের উৎপাত দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁশি ভুভুজেলায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি। নিষেধ করা হলেও এই বাঁশি বাজাতে দেখা গেছে তরুণদের।
সকালে রমনা উদ্যানে প্রবেশের সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক দফা, মৎস্য ভবন এলাকায় দ্বিতীয় দফা, রমনা উদ্যানে রমনা চায়নিজের আসনে আরেকবার এবং রমনা বটমূলের অনুষ্ঠান স্থলের কাছে আরেক দফা তল্লাশিতে পড়তে হয়েছে। ঢুকতে হয়েছে আর্চওয়ে দিয়ে।
পুরোটা সময় অনুষ্ঠান স্থলের ছবি তুলতে দেখা গেছে ড্রোন দিয়ে। পুলিশ ও র্যাব কার্যালয় থেকে উড়ন্ত ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হয়েছে।
হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলে র্যাব শুভেচ্ছা জানিয়েছে নববর্ষের। সেই সঙ্গে দেয়া হয়েছে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর। কোথাও কোনো তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
একইভাবে যারা কারওয়ানবাজরি দিয়ে সোনারগাঁও হোটেল হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকেছেন, তাদেরকে বাংলামোটর, পরিবাগ, শাহবাগ এলাকাতে তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে। অন্য সব রুটেও ছিল নিরাপত্তার একই রকম আয়োজন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মুহানগর পুলিশের ক্রাইম অ্যন্ড অপস বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বর্ষবরণের অনুষ্ঠানকে সুন্দরভাবে পালন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে আর্চওয়ে, তল্লাশি, সিটি ক্যামেরা, ডগস্কয়াড, ভ্রাম্যমান আদালত। মানে সুন্দরভাবে পালনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে। সবকিছু সুন্দর মতই হচ্ছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন