গ্রামবাসীরা তৈরি করল পানির ওপর ভাসমান ফুটবল মাঠ!
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পানইয়ে দ্বীপ। এখানে জালের মত বিছিয়ে আছে জলধারা। ডুবো পাহাড় আর পাথুরে তটের আঁকাবাঁকা জলপথের সৌন্দর্য চোখ ভরিয়ে দেয়। সেখানেই চলছে ফুটবলের অনুশীলন। কিন্তু পানির উপরে। কারণ পানইয়ে দ্বীপে ফুটবল মাঠ তৈরির জমি নেই। তাই উদ্যোগ নেওয়া হয় ভাসমান মাঠ তৈরির। শুরু হয়ে যায় বিশাল কর্মযজ্ঞ। ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার সেই ঝড়ো ফুটবলের মুহূর্ত দেখে আপ্লুত থাই গ্রামবাসী নেমে পড়লেন ফুটবল শিখতে।
চারিদিকে পানি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম। এখানকার বাসিন্দারা মূলত মৎস্যজীবী। তাদের উত্তরাধিকারীরা মেতে আছে ফুটবলে। প্রথম সমস্যা ছিল জমির। শেষপর্যন্ত ঠিক হল পানির উপরেই মাঠ তৈরি করা হবে। বয়স্করা বাধা দিয়েছিলেন। যুক্তি দিয়ে সেই বাধা উড়িয়ে কয়েকজন নেমে পড়েছিল পানিতে ভেসে থাকা মাঠ তৈরিতে। শুরু হয় কাজ। পুরনো কাঠ-পেরেক জোগাড় করা হলো। পানির মধ্যে খুঁটি পুঁতে তৈরি হয় মাচা। সেই মাচাতেই তৈরি হয় মাঠ। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম ফুটবল মাঠ যেটা ভেসে থাকে পানির ওপর।
প্রথম দিকে সমস্যা ছিল প্রচুর। আনাড়ি হাতে তৈরি সেই পানিতে ভাসা মাঠের ইতি উতি পেরেকের খোঁচা বেরিয়ে ছিল। তাতে আঘাত পাওয়া নিত্য ব্যাপার। বল নষ্ট হয়েছে অনেক। তার থেকেও সমস্যা বল জোরে মারলেই সেটা পানিতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু সে সব আটকাতে পারেনি ফুটবলকে। এই সমস্যাই স্থানীয় ফুটবলারদের বল নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পারদর্শী করে দেয়।
পানইয়ে দ্বীপের ফুটবলাররা এখন পানিতে ভাসা মাঠেই পুরোদমে অনুশীলন করে যাচ্ছেন। কিছু প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে দলটি। স্থানীয় একটি প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে দুর্দান্ত লড়াই করে তাক লাগিয়েছে পাইনিয়ে ফুটবল দল। সেই থেকে শুরু। তরতর করে এগিয়ে চলেছে এখানকার ফুটবল। নজরকাড়া ফুটবল খেলতে শুরু করেছে দলটি। নতুন করে তৈরি হয়েছে পানিতে ভাসমান প্লাস্টিক মাঠ। বর্তমানে পানইয়ে ক্লাব দক্ষিণ থাইল্যান্ডের অন্যতম সেরা একটি ক্লাব।
সম্প্রতি পানইয়ে ক্লাবের সন্ধান পায় একটি থাই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার কর্মীদের উদ্দীপনা বাড়িয়ে তুলতে পানইয়ে দলের উপর একটি শর্ট ফিল্ম তৈরি করা হয়। এরপর থেকে ছড়িয়ে পড়ে দ্বীপটি ও পানিতে ভাসমান ফুটবল মাঠের কথা। সব জেনে আপ্লুত ফিফা। বিশ্ব ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কর্তাদের অনুরোধে পানইয়ে ফুটবল নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে দুনিয়া জুড়ে। এবার তাদের একটাই চাওয়া, ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনা যদি একবার এখানে আসতেন…।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন