হাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, অবশেষে স্বপ্নপূরণ

অবশেষে নানা জল্পনা কল্পনা শেষে মহাকাশে দ্বার উন্মোচিত হল লাল-সবুজের। যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাতে মহাকাশের পথে যাত্রা করলো বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এর মধ্যে দিয়ে তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ার সর্বোচ্চ স্তরে পা রাখলো বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিট) ‘স্পেস এক্সে’র ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাবেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়।

স্যাটেলাইন উৎক্ষেপণকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স জানিয়েছে, স্যাটেলাইটটির সফল উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হয়েছে। মহাকাশের পথে দ্রুতবেগে ছুটে চলা স্যাটেলাইটটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছতে সময় নিয়েছে ৩৩ মিনিট। সেইসাথে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পার হওয়া স্যাটেলাইটটির বহনকারী রকেট ফ্যালকন-৯।

গতকাল কারিগরি জটিলতার কারণে একই সময় ফ্লোরিডার এ উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ আটকে যায়। এর আগেও গত ৪ মে উৎক্ষেপেণের কথা ছিল প্রায় ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ স্যাটেলাইটটির । কিন্তু, কারিগরি কারণে ৭ মে উৎক্ষেপেণের সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা পিছিয়ে ১০ মে করা হয় এ মহাকাশ যাত্রার। কিন্তু শেষমেস একদিন পর মহাকাশ জগতে অনন্য এক মাইলফলক স্পর্শ করল বাংলাদেশ।

উৎক্ষেপণের পর স্যাটেলাইটটি কবে নাগাদ মহাকাশে পৌঁছবে সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেজবাহউজ্জামান বলেন, ফ্যালকন-৯ রকেট ৩.৫ মেট্রিক টন ওজনের বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ স্যাটেলাইটটি মহাকাশে নিয়ে যাবে। মহাকাশে নির্দিষ্ট স্লটে এটির পৌঁছতে ৮ দিন সময় লাগবে।

এ স্যাটেলাইটের সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপনের ফলে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয়, দেশের দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। সেইসাথে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করছেন তারা।

এদিকে দেশের এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত সরাসরি দেখতে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সেখানে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ স্যাটেলাইট প্রকল্পটির শীর্ষ গবেষক ও কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, নিজস্ব স্যাটেলাইটের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৫৭ তম দেশ। ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রজেক্ট নেয়া নেয় সরকার। বিটিআরসি ২০১৫ সালের নভেম্বরে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থালেস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়ার স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টার স্পুটনিক’র কাছ থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় (স্লট) কক্ষপথ স্লট কেনে। একইসাথে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য স্পেস এক্স’র ফেলকন-৯ লঞ্চার ব্যবহার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও চুক্তি করে বাংলাদেশ। এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের মহাকাশ যাত্রার নতুন দিগন্ত।