অবনমনের জ্বালা মেটাতে স্টেডিয়ামে আগুন!

গোলপোস্টের সামনে দলা পাকানো অগ্নিকুণ্ড। গ্যালারি থেকে ছুড়ে মারা হচ্ছে একের পর এক বাজি-পটকা। কালো ধোঁয়ায় সয়লাব হামবুর্গের ঘরের মাঠ। হঠাৎ করেই এমন দৃশ্য দেখলে যে–কারও মনে হবে, খেলার মধ্যে বুঝি দাঙ্গা-ফ্যাসাদ লেগেছে! আসলে তা নয়, বুন্দেসলিগায় নিজেদের ইতিহাসে প্রথম অবনমনের জ্বালা সইতে না পেরে কাল স্টেডিয়ামে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন হামবুর্গ–সমর্থকেরা।

বরুসিয়া মুনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে হামবুর্গকে শুধু জিতলেই চলত না, অন্য ম্যাচে কোলনের বিপক্ষে ভলফসবুর্গকে হারতেও হতো। কিন্তু ২-১ গোলের জয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকমতো সারলেও ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। কোলনকে ৪-১ গোলে হারিয়ে হামবুর্গ–সমর্থকদের হৃদয় ভেঙে দেয় ভলফসবুর্গ। এই ম্যাচ শেষ হয়েছে হামবুর্গ-মুনশেনগ্লাডবাখ ম্যাচের আগে। অর্থাৎ গ্যালারিতে বসেই হামবুর্গ–সমর্থকেরা জানতে পারেন, আগামী মৌসুমে আর বুন্দেসলিগায় থাকা হচ্ছে না। ব্যস, এরপরই শুরু হয় নরক গুলজার!

গোলপোস্টের সামনে বড় বড় অগ্নিকুণ্ড ছুড়ে মারেন সমর্থকেরা। এতে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় স্টেডিয়ামের এক পাশ। মাঠে নেমে পড়ে পুলিশ। ম্যাচটা তাই শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের চেয়েও ১৬ মিনিট দেরিতে। রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর পর অনেক হামবুর্গ–সমর্থকই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তবে দলটির সমর্থকদের একাংশ দুঃখ প্রকাশের এমন ‘ভাষা’ মেনে নিতে পারেনি। মাঠে আগুন লাগানো সমর্থকদের প্রতি তাঁরা চিৎকার করে বলেছেন, ‘আমরা হামবুর্গের জনগণ, তোমরা তা নও! ওদের বের করে দাও!’ এই মৌসুমে হামবুর্গের তৃতীয় কোচ ক্রিস্টিয়ান টিৎজ উন্মত্ত সমর্থকদের নিয়ে বলেন, ‘এটা গুটি কয়েক মানুষের কাজ যাদের স্টেডিয়াম নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।’

কিন্তু ডর্টমুন্ডের অবনমন নিয়ে সমর্থকদের মাথাব্যথা আছে। বায়ার্ন, ডর্টমুন্ড, শালকে, মুনশেনগ্লাডবাখের মতো অভিজাত দলগুলোর বুন্দেসলিগা থেকে নেমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু ১৯৬৩ সালে বুন্দেসলিগা চালুর পর জার্মানির এই শীর্ষস্থানীয় লিগের প্রতি মৌসুমেই খেলেছে হামবুর্গ। ছয়বার জার্মান লিগ জেতা আর ১৯৮৩ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা আগামী মৌসুমে কোলনের সঙ্গে নেমে যাবে দ্বিতীয় বিভাগে। ভলফসবুর্গকে দিতে হবে রেলিগেশন প্লে-অফের পরীক্ষা।

হামবুর্গ কিংবদন্তি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী জার্মানির প্রথম তারকা ফুটবলার উয়ে সিলার তাঁর প্রিয় দলের অবনমনের কষ্ট লুকিয়ে রাখতে পারেননি। সিলার বলেন, ‘হামবুর্গকে ছাড়া বুন্দেসলিগা আমি কল্পনাই করতে পারছি না। জীবনে কখনো ভাবিনি হামবুর্গের অবনমন দেখতে হবে আমাকে।’

১৩০ বছরের পুরোনো ক্লাব হামবুর্গের সাম্প্রতিক মৌসুমের পারফরম্যান্স কিন্তু তেমন একটা ভালো ছিল না। গত চার মৌসুমে তাঁরা অনেকটা ভাগ্যের জোরে অবনমন এড়াতে পেরেছিল। কিন্তু ‘অলৌকিক’ ঘটনা তো আর প্রতি মৌসুমেই ঘটে না! সিলারও মেনে নিচ্ছেন ব্যাপারটা, ‘কয়েক বছর ধরেই আমরা এই অলৌকিক কাণ্ড দেখে আসছি। কিন্তু অলৌকিক কোনো কিছু চিরজীবন থাকে না।’