বাজারে ছাড়ার টার্গেট ছিল ৫ কোটি টাকার জাল নোট!
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৫ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছাড়ার টার্গেট নিয়েছিল একটি চক্র। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে তারা তৈরি করতে পারেন এক লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট। আর এই লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট মাত্র ১৫ হাজার টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করতো তারা। এভাবে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে আসছি চক্রটি। এই চক্রের এক নারীসহ ১০ জনকে ধরার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের একটি টিম। গ্রেফতাররা হলেন- রফিক, জাকির, হানিফ, রাজন শিকদার ওরফে রাজা ওরফে রাজু, খোকন ওরফে শাওন, রিপন, মনির, সোহরাব, জসিম ও লাবণী। কদমতলী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
বিশেষ অভিযানে তাদের সঙ্গে প্রায় এক কোটি জাল টাকা জব্দ করা হয়। সেইসঙ্গে জব্দ করা হয় টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। এর মধ্যে জাল টাকা তৈরির জন্য কালো রঙের অ্যাসার একটি, একটি ল্যাপটপ, দুটি কালার প্রিন্টার, জাল টাকার প্রিন্টকৃত ১৬টি পাতা, স্ক্রিন বোর্ড ১০টি (এর সাহায্যে জালনোটে জলছাপ হলগ্রাম লেখার প্রিন্ট দেয়া হয়), স্ক্রিন বোর্ডের পিড়া, জালটাকা তৈরির আইপিআই কালির সাদা প্লাস্টিকের কৌটা ২৭টি, কালার কার্টিজ ৩০০টি ও জালটাকা তৈরি সূতা ও রোল রয়েছে।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, জাল টাকা তৈরির এই চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম রফিক। তিনি প্রথম জীবনে নোয়াখালী ছগির মাস্টার নামক এক ব্যক্তির সহযোগী হিসেবে জাল টাকা তৈরি করতেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেই সরঞ্জামাদি ক্রয় করে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন পূর্বজুরাইন বৌ-বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকা তৈরি শুরু করে। তিনি তার অন্যতম সহযোগী রাজন, লাবণী ও অন্যদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কদমতলীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে জাল টাকার ব্যবসা করে আসছিলেন। গ্রেফতারকৃত জাকির জাল টাকার তৈরির উদ্দেশ্যে বিশেষ ধরনের কাগজে বিভিন্ন রকমের জলছাপ এবং নকল নিরাপত্তা সুতা স্থাপন করত।
দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, উৎপাদকের এক লাখ টাকা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে তা পাইকারি বিক্রেতার নিকট এই জাল এক লাখ টাকা ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। পাইকারি বিক্রেতা প্রথম খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, প্রথম খুচরা বিক্রেতা দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এবং দ্বিতীয় খুচরা বিক্রেতা মাঠপর্যায়ে সেই টাকা সমমূল্যে অর্থাৎ আসল এক লাখ টাকায় বিক্রয় করে।
তিনি আরও জানান, মাঠপর্যায়ে কর্মীরা বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, দ্রবাদি ক্রয়ের মাধ্যমে এই জালনোট বাজারে বিস্তার করে থাকে। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে এই চক্র বাজারে প্রায় ৫ কোটি টাকা ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
‘গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। এই চক্রটির সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশে আরও বেশ কটি চক্র সক্রিয় ছিল। তাদের অনেকেই এখন জেলে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন বাদে সবাই একাধিকবার এই জাল টাকার কারবারের কারণে গ্রেফতার ও জেল খেটেছে’,- বলেন দেবদাস ভট্টাচার্য ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন