‘বাজেটে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে’
২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পরিসংখ্যান দিয়ে অর্থনীতির যে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে তাতে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তার প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন সাকী।
রোববার রাজধানীর হাতিরপুলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে সাকী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির উন্নয়নের প্রশ্নে প্রবৃদ্ধির হিসেব এখন নেয়া হয় না। মুদ্রার যেভাবে অবমূল্যায়ন হয়েছে তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আর আয়ের সঙ্গে বৈষম্যমূলক। মানুষের দারিদ্র্যের ব্যাপারে টাকার মান দেখানো যেতে পারে কিন্তু মানুষের জীবন মানের কোনো পরিবর্তন হবে না।
সাকী বলেন, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার জন্য যে ধরনের ক্ষমতা কাঠামো থাকার প্রয়োজন সেটা নেই। তাই এ ধরনের অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত বাজেট গতানুগতিকতার ফলে পুরো অর্থনীতিতে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী ঘোরতর সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সরকার ধনী-গরিব সবার জন্য প্রযোজ্য ভ্যাট আহরণে যতোটা উদ্যোগী, মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্তের কাছ থেকে আয় ও মুনাফার কর আহরণে ততোটা আগ্রহী নয়। সরকারের কর এবং ভ্যাট আহরণের সক্ষমতা বৃদ্ধির এমন কোনো নমুনা দেখা যাচ্ছে না যাতে বলা যায়, তারা এমন নাটকীয় মাত্রায় আহরণ বাড়াতে সক্ষম হবে। বাজেটের আকার সময়ের সাথে যেভাবে বাড়াতে হয়েছে, সেভাবে সরকারের কর-বর্হিভূত আয় বাড়েনি। তাই করের পরিমাণ অসমানুপাতিক হারে বাড়াতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১১-১২ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানির দেয়া কর বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ গুণের কম, আর ব্যক্তির আয় থেকে পাওয়া কর বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। সরকার তার আয় বাড়ানোর জন্য কোম্পানির চেয়ে বেশি নির্ভর করছে ব্যক্তির আয়ের ওপর।
ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও ব্যাংক মালিকদের সুবিধা দিতে যারা পিছপা হচ্ছেন না, তারাই যদি করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর কথা বললে সরকারের আয় কমে যাওয়ার যুক্তি দেন- তাহলে সেটা ধোপে টেকে না। দুর্নীতিতে যুক্ত ব্যাংক মালিকদের সুবিধা না দিয়ে এ সুযোগগুলো তরুণ আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তাদের দেয়া ন্যায্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সরকার উল্টো পথে হাঁটবার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আাবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ আকার বেড়েছে প্রস্তাবিত বাজেটের।
দেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর ১২তম বাজেট। গতকালের বাজেট পেশের মধ্য দিয়ে টানা দশবার বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন