যেসব কারণে বিএনপির ওপর আস্থা নেই ভারতের!
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আস্থার ঘাটতিতে বিএনপি। প্রতিবেশী দেশটি এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না দলটিকে। এর আগে একাধিকবার নয়াদিল্লিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি জাতীয়তাবাদী দলটি- এমন কথা চালু রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। যদিও বিএনপি এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে সদ্য ভারত সফর শেষ করে ফেরা দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কথাটা ঠিক নয়। বিএনপি দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে বিশ্বাসী। তাদের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটির ঘনিষ্ঠতা ভালোই।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে এসেছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় ভারতের। তবে দেশটির সাবেক কূটনীতিক বিশেষ করে বীণা সিক্রিসহ অন্যরা যেভাবে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করতে শুরু করেছেন তাতে মনে হচ্ছে তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরিবর্তন আসবে।
তারা কি পরিষ্কার করে এসেছেন- জানতে চাইলে খসরু বলেন, বিএনপি চায় সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যা দেশের জনগণও চায়। তারা নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদলটি ভারত সফর করে গত রবিবার ফিরে এসেছে। তার সঙ্গে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ূন কবির। তারা ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত অরজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন-ওআরএফ, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন-ভিআইএফ এবং রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন-আরজিএফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি এর আগে ভারতকে দেওয়া একাধিক ওয়াদা পূরণ করেনি। এর মধ্যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির অভিযোগ, তিনি ১৯৭৮ সালে ভারতকে ট্রানজিট দিতে রাজি হননি। ১৯৮০ সালে জিয়া কলকাতায় গ্যাস সরবরাহেরও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেটাও রক্ষা করা হয়নি। তার স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। সর্বশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপি সরকারের নীতিনির্ধারকদের তারেক রহমান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে উত্তর ভারতে গ্যাস সঞ্চালনের পাইপলাইন বসাতে দেবেন। কিন্তু তিনিও বাবার মতো সে কথা রাখেননি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে একাধিকবার বলেছেন, বিএনপি ভারতে গ্যাস রফতানির ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসেছিল। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভারতের সঙ্গে বিএনপি এমন কোনো ওয়াদা করেনি। ভারত-ঘনিষ্ঠ এক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায় দিল্লি গিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভারতের কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। সে সময় ভারতের যত নেতা-নেত্রীর সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের সবাইকে খালেদা একই কথা বলেছেন। ওয়াদা করেছেন, ভারতের জন্য অকল্যাণকর কোনো কিছু তিনি হতে দেবেন না।
দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদকে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এই সফর নতুন দিনের সূচনা; পেছনে নয়, আমাদের তাকাতে হবে সামনের দিকে।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জবাবে বলেন, ‘আমরাও গতকাল নয়, সামনের দিকে তাকাতে চাই।’
এসব বিষয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, কেন খালেদা জিয়াকে এমন ওয়াদা করতে হয়েছে? কেন অতীত নিয়ে তার এই ভীতি? কেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদার ‘গতকালের’ ঘটনা দেখতে চান না? কিন্তু বললেই কি অতীত মুছে ফেলা যায়? কারণ ১৯৯১-৯৬, ২০০১-০৬ পর্যন্ত খালেদার শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক কোন অতলে পৌঁছেছিল, হিন্দু-সংখ্যালঘু নির্যাতন কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল তা সবাই জানে। ১০ ট্রাক অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা খালেদার ভাষায় ‘দেশপ্রেমিক’, সবই অতীত, সবই ইতিহাস, এবং সে ইতিহাস কলঙ্কময়। এমন পরিস্থিতিতে ভারত বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না।
শুধু ভারত নয়, বিএনপি শাসনামলে চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সম্পর্ক নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশে তাইওয়ান সেন্টার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির উদ্যোগে প্রচণ্ড চটেছিল চীন। সেসব ক্ষত চাইলেই মুছে ফেলা যাবে না। বিএনপি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের পর বিবিসির এক সাংবাদিক বাংলাদেশে একসময় হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত বীণা সিক্রিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি ধারণা হচ্ছে, ভারতের কাছে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি পছন্দের দল এবং বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসুক এটি তারা চায় না।’ জবাবে তিনি বলেন, ভারত বিএনপিকে পছন্দ করে না এবং আওয়ামী লীগের প্রতিই তাদের পক্ষপাত এটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। ভারত বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে আগ্রহী। ভারতের নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসির মূল কথাও এটাই। পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতেই এটা হবে। বিএনপি প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছে বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে কথা বলতে, সে বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বীণা সিক্রি বলেন, ভারত যে-কারো সঙ্গে কথা বলতে রাজি। কারণ তারা পিপল-টু-পিপল রিলেশনশিপে বিশ্বাসী।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন