বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে তোপের মুখে ইউএনও
বগুড়ায় বাল্যবিয়ে ভণ্ডুল করতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কনের স্বজনদের তোপের মুখে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বিকালে শহরের নারুলী খন্দকারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় কনের চাচা রকি মিয়াকে দুই মাস ও খালা সুইটি বেগমকে এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আদালতের বিচারক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর রান্না করা খাবার ফেলে দেয়া ও চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলায় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, কে বা কারা খাবার ফেলে দিয়েছেন তা তিনি দেখেননি।
জানা গেছে, বগুড়া শহরের নারুলী খন্দকারপাড়ার অটো টেম্পু চালক বাবু মিয়ার মেয়ে রজনী খাতুন (১৫) স্থানীয় উত্তরণ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সোনাতলা উপজেলার হলিদাবগা গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে বাবুলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন বাবু মিয়া।
শুক্রবার দুপুরে প্রতিবেশী আবদুর রশিদ মাস্টারের বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে ছিল। দুই পক্ষের আত্মীয়-স্বজনে বাড়ি ঠাসা ছিল। অতিথিদের আপ্যায়ন শুরু করা হয়।
বরপক্ষ আসার আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিয়ে বাড়িতে যান। আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে বাবু মিয়া ও তার স্ত্রী ফাইমা তাদের কনেকে নিয়ে সটকে পড়েন।
আদালতের সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা প্রায় ৪০০ মানুষের জন্য আয়োজন করা খাবার মাটিতে ফেলে দেয় এবং চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলে। এ সময় বাল্যবিয়ের আয়োজন ও আদালতের কাজে বাধা দেয়ায় কনের দাদা (বাবু মিয়ার মামা) সেকেন্দার আলী (৬৫), খালা সুইটি বেগম ও চাচা রকি মিয়াকে আটক করা হয়।
পরে সেকেন্দার আলী অসুস্থ হয়ে পড়লে কনের আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তারা লাঠিসোটা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে সেকেন্দার আলীকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিয়ে ভণ্ডুল হয়ে যাবার পর আটক সুইটি ও রকিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেয়া হয়। আদালত সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অপরাধে রকিকে দুই মাস ও সুইটিকে এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে খাবার নষ্টের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, স্কুলছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গেলে স্বজনরা লাঠিসোটা নিয়ে আদালতের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। আদালতের কাজে বাধা দেয়ায় দুজনকে বিনাশ্রম সাজা দেয়া হয়েছে। তবে বিয়ে বাড়িতে খাবার কে নষ্ট করেছে তা তিনি দেখেননি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন