কেন ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব

মূলত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতেই ঢাকা সফরে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ১ জুলাই ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন তিনি। ৩ জুলাই তিনি নিউ ইয়র্ক ফিরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গুতেরেসের সফরের মূল উদ্দেশ্য হবে, নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের প্রশ্ন। মহাসচিব ঢাকা সফরে এসে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ঔদার্যের প্রশংসা করবেন। পাশাপাশি শরণার্থী প্রত্যাবাসনের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়কে আরও সোচ্চার পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেবেন তিনি।

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সামরিক-বৌদ্ধতন্ত্রের প্রচারণায় রাখাইনে ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গা-বিদ্বেষ। ২০১৬ সালের আগস্টে অভিযান জোরদার করার আগের কয়েক মাসের সেনাপ্রচারণায় সেই বিদ্বেষ জোরালো হয়। এরপর শুরু হয় সেনা-নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে। উদারভাবে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দেয়। এর আগে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান হিসেবে এই রোহিঙ্গাদের দেখতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে অ্যান্তোনিও গুতেরেসের এটাই হবে বাংলাদেশে প্রথম সফর। তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিককে উদ্ধৃত করে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তার। সোমবারে রোহিঙ্গা শিবিরে ভাগ্যদূর্গত শরণার্থীদের দেখতে যাবেন গুতেরেস। তহবিল দাতাদের সহায়তা বাড়াতে একইদিনে তিনি বিভিন্ন প্রতিনিধি ও ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

সফরে গুতেরেসের সঙ্গী হবেন ঊর্ধ্বতন জাতিসংঘ কর্মকর্তারা। শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের পক্ষে ফিলিপ গ্রান্ডি, পপুলেশন ফান্ড-এর পক্ষে নাতালিয়া কানেম তার সঙ্গে থাকবেন বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবে জাতিসংঘ দল। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাসম্পন্ন প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের ব্যাপারটিও খতিয়ে দেখবেন তারা’।

গত কয়েক মাসে পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা আবাস বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। এক পর্যায়ে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও অব্যাহত থাকে জাতিগত নিধন। এরপর সামরিকায়নকে জোরালো করতে অবশিষ্ট ঘরবাড়িও নিশ্চিহ্ন করা হয়। ঘোষণা দেওয়া হয় জমি অধিগ্রহণের। শুরু হয় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এএফপির শুক্রবারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ফরাসি বার্তা সংস্থার খবর থেকে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাশূন্য বাফারজোন প্রতিষ্ঠা করতে সেখানে বৌদ্ধদের অর্থায়ন ও সেনা মদতে সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রত্যাবাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ধাপে ধাপে এইসব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে সামরিকতায় নির্মিত বৌদ্ধতন্ত্র আর ‘মিয়ানমার ন্যারেটিভস’ নামের প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করে।