যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ : সঙ্কটের মুখে চীনা শিল্প?
যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, চীন থেকে আমদানি করা শত শত বিলিয়ন ডলার পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা বেশকিছু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে।
বেইজিং অভিযোগ করেছে, অর্থনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক তালিকায় যেসব চীনা পণ্য রয়েছে, তার একটি সিএফ মোটর সাইকেল।
চীনের কোম্পানি ‘সি এফ মোটো’র তৈরি করা একরকম বারো হাজার মোটর সাইকেল এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে।
কিন্তু এখন তাদের এরকম বাণিজ্য অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
সে কথাই বলছিলেন কোম্পানির অন্যতম ব্যবস্থাপক গাও চিং। ”অতিরিক্ত পঁচিশ শতাংশ ট্যাক্স অবশ্যই আমাদের ব্যবসায় অনেক প্রভাব ফেলবে। এটা আমাদের মুনাফা অনেকাংশে কমিয়ে দেবে।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য সি এফ মোটো আমেরিকানদের চাকরির সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে।
কিন্তু সেটা মনে করেন না গাও চিং। তিনি বলছেন, ”আপনি যদি আমাদের কারখানাটি ভালো করে দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, যে আমরা আমাদের নিজেদের যোগ্যতাতেই এ পর্যন্ত এসেছি এবং টিকে রয়েছি। সেটা আমরা করেছি আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান মেনেই।”
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সেটা মনে করেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, নিয়মনীতি ভেঙ্গে চীনের অর্থনীতি গড়ে উঠেছে।
তিনি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন চীনের প্রধান শিল্পনীতি নিয়ে, যাকে চীনারা বলছে ‘মেড ইন চায়না টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফাইভ’।
এটা রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে একটি বড় ধরণের পরিকল্পনা, যার উদ্দেশ্য বিশ্বের অর্থনীতিতে চীনের এক নম্বর হয়ে ওঠা। যার প্রধান উপাদান হবে রবোটিক্স এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেলসের মতো প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া।
সাংহাইয়ের কোম্পানি ফোরইয়া ইন্টেলিজেন্স রবোটিক্স ব্যবহার করে এমন একটি বিশেষ পোশাক তৈরির চেষ্টা করছে, যেটি মেরুদণ্ডে আঘাত পাওয়া লোকজনকে হাটতে সহায়তা করবে।
কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা গু জিয়ে স্বীকার করেন, এটা হচ্ছে সেই ধরণের কোম্পানি, যাদের কথা চীনের ‘মেড ইন চায়না টুয়েন্টি টুয়েন্টি ফাইভ’ শ্লোগানে বলা হচ্ছে।
তার মতে, এই শ্লোগান নিয়ে অন্য দেশের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এই শ্লোগান হচ্ছে চীনের উন্নয়ন ধরে রাখার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মাত্র। এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই উপকৃত হবে।
তিনি বলছেন, ”চীন হচ্ছে একটি মানব শিশুর মতো। আপনি কখনোই একটি শিশুকে বড় হওয়া থেকে আটকে রাখতে পারবেন না। বরং সেখানে বাধা সৃষ্টি না করে, সেই উন্নয়নে সহযোগী হওয়া, অভিজ্ঞতা দিয়ে তাকে সঠিক পথ দেখানো ভালো, যার মাধ্যমে ভালো অংশীদার হওয়া সম্ভব।”
তবে এসবে সন্তুষ্ট নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এই মুহূর্তে তার শুল্ক তালিকায় রয়েছে সিএফ মোটোর মতো অনেক ভারী শিল্প পণ্য, যা এই কারখানায় তৈরি হয়।
এখন চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে পাল্টা জবাব দিতে চাইছে।
অন্যদিকে মি. ট্রাম্প চীনে তৈরি প্রায় সব পণ্যের ওপরই শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন।
কয়েক দশকের বাণিজ্য সম্পর্কের পর বিশ্বের প্রধান দুই অর্থনীতির দেশ অনিশ্চিত এক বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে এগিয়ে চলেছে। সেখানে অর্থপূর্ণ আলোচনার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। আর কোন পক্ষই যেন নিজেদের মধ্যকার এই দেয়াল ভাঙ্গতে প্রস্তুত নয়।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন