রাজধানীতে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে ভাড়াটিয়াদের জীবন!
বাড়িভাড়া। রাজধানীর ভাসমান মানুষগুলোর জন্য যেন আর্থিক এবং মানসিক অত্যাচারের আরেক নাম। কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়, যখন তখন ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া আর বাসা ছাড়ার হুমকি, সবমিলিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ভাড়াটিয়াদের জীবন।
আইনজীবীরা বলছেন, আদালতের নির্দেশনার পরও দীর্ঘদিনেও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠন না হওয়ায় সুরাহা হচ্ছে না ভাড়াটিয়া-বাড়িওয়ালা বিরোধের।
ড্রইং, ডাইনিং একসঙ্গেই। পুরো বাসায় একটি মাত্র বেডরুম। তার ওপরে স্যাঁতস্যাঁতে পুরনো দেয়াল। কিন্তু ভাড়া শুনলে যে কারোর চোখই কপালে উঠবে। মাস শেষে যখন গুণে গুণে বাড়িওয়ালাকে দিতে হয় ১৬ হাজার টাকা, তখন অসহায় ভাড়াটিয়ার একমাত্র উপায়ই যেন সাবলেট।
বাড়িভাড়া নিয়ে যেসব অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর আগাঁরগাওয়ের কয়েকটি মহল্লা ঘুরে দেখা গেলো তার বাস্তব উদাহরণ। এক ভাড়াটিয়া বলেন, ‘সাতশ’ স্কয়ার ফিটের বাসা এখন পনেরো হাজারের নিচে ভাড়া পাওয়া যায় না।’
অপর একজন বলেন, ‘বাড়িওয়ালা আমাদের কোনো কথাই শোনে না। তারা বলেন, পারলে থাকো না হলে চলে যাও। এটা তো কোনো সমাধান নয়। এভাবে আর কতদিন?’
গুলশান, বারিধারা, ধানমণ্ডি কিংবা লালমাটিয়া। ন্যূনতম ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা মাসিক আয় না হলে, এসব এলাকায় থাকা এখন অনেকটা স্বপ্নের মতো। রাজধানীর কাঁঠালবাগানও পিছিয়ে নেই কোনো অংশে।
বাড়িভাড়ার নামে ভাড়াটিয়াদের ওপর এক ধরণের যে নির্যাতন চলছে, তার চিত্র অনেকটাই ফুটে উঠে কাঁঠালবাগান এলাকায়। নানা বিড়ম্বনা থাকলেও মাস শেষে গুণতে হয় বড় অংকের টাকা।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, কর্মস্থল কিংবা সন্তানদের স্কুল কলেজের কারণে সুবিধাজনক এলাকায় বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। আর সেই সুযোগেই ইচ্ছা মতো ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন বাড়িওয়ালারা।
সরুগলি আর সামান্য বৃষ্টিতে হয় কোমর পরিমাণ পানি। তবুও এখানকার আকাশচুম্বী বাড়িভাড়ায় নিরুপায় ভাড়াটিয়ারা।
এত এত অভিযোগ যেন গায়ে মাখারই সময় নেই এই শহরের বাড়িওয়ালাদের। ফার্মগেট এলাকার এক বাড়িওয়ালা বলেন, ‘ভাড়ার বিষয়টি যারা বেশি বলছেন, তারা আসলে ভুল বলছেন। ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়েই আছে।’
আইনের কার্যকারিতা না থাকাকেই বাড়িভাড়া বিরোধের অন্যতম কারণ বলছেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের বলছে, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে প্রয়োজন আইনের আরো সহজীকরণ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরকার বা সংসদ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাড়ি ভাড়া আইনটা এক প্রকার অকার্যকর হয়ে আছে। এই জন্য আমরা বিকল্প পথে কিছু নির্দেশনা চেয়েছি।’
বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে এলাকাভেদে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে মনিটরিং কমিটি গঠনের পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন