পুলিশের নামে মামলা দিতে সার্জেটকে বাধ্য করলো শিক্ষার্থীরা

অবরুদ্ধ মিরপুর। ১০ নম্বর গোল চক্করে হাজারো শিক্ষার্থী। মিরপুর ১, ২, ১২, ১৩, ১৪ নম্বর দিক থেকে সব দিকের রাস্তা বন্ধ। কোনো গণপরিবহন চলছে না সকাল থেকেই। তবে মাঝে মাঝে খুবই কমসংখ্যক প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেখা যাচ্ছে।

এই পথগুলোতে যেসব গাড়ি আসছে, ছুটে গিয়ে লাইসেন্স চেক করছে এখানকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। যদি কোনো গাড়ির চালকের লাইসেন্স না থাকে তাহলে চাবি নিয়ে তা দায়িত্বরত পুলিশের কাছে দিয়ে দিচ্ছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেল। এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও ঝরছে, মিরপুর ১৩ নম্বরে বিআরটিএ অফিসের দিক থেকে মোটরসাইকেলে মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে এগিয়ে আসছেন একজন পুলিশ সদস্য। পুলিশ ও মোটরসাইকেল দেখে সেদিকে ছুটে গেল শিক্ষার্থীদের দল। ঘিরে ধরেই দেখাতে বললো লাইসেন্স।

মোটরসাইকেল আরোহী এসআই পদমর্যদার নুরুল হক তো পড়লেন মহাবিপদে। কারণ তার সঙ্গে তখন লাইসেন্স নেই। ততক্ষণে প্রায় শ দেড়েক শিক্ষার্থী ঘিরে রাখে সেই পুলিশ সদস্যসহ মোটরসাইকেলটিকে। মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে বলে উঠলো ‘আমারাই সার্জেন্ট,আপনার লাইসেন্স দেখান। শিক্ষার্থীরা তো তখন নাছোড়বান্দা, লাইসেন্স দেখানো ছাড়া তো সেই মোটরসাইকেল আরোহীকে যেতেই দেবে না। সেই পুলিশ সদস্য তখন বলছিলেন, লাইসেন্স তার সঙ্গে আপতত নেই।কাজে বের হয়েছেন, তাই আনা হয় নি। ততক্ষণে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা তাকে পুরো ঘিরে ধরে।

শিক্ষার্থীরা সেই পুলিশ সদস্যকে বাধ্য করলো মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টের কাছে নিয়ে যেতে। শিক্ষার্থীদের চাপে সেই সার্জেন্টও বাধ্য হলেন ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় এই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দিতে।

সেখানে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, আমরা সকাল থেকেই আমাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছি। পাশাপাশি গাড়ির লাইসেন্স চেক করছি। অন্য সবার মতো এই পুলিশ সদস্যকেও লাইসেন্স দেখাতে বললে তিনি দেখাতে পারিননি। সেকারণে সার্জেন্টের কাছে উনাকে এনে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকার মামলা দিতে বলেছি।

বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করছে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। এদিকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাতে হাত ধরে মূল সড়কে বৃত্ত তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে দল বেধে রাস্তার ঠিক মাঝখানে অবস্থান নেয় মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজ, জার্মান টেকনিক্যালসহ আশেপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রাজধানীর অন্যান্য স্থানের মতো মিরপুরের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে শতশত শিক্ষার্থী। সড়ক দুর্ঘটানার বিচার, নিরাপদ সড়কের দাবির আর ‘আমার মা কাঁদে, নৌমন্ত্রী হাসে’ স্লোগানে কম্পিত হয় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্কর।

বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ছোট-বড় মিছিল নিয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থের সঙ্গে সামিল হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরদের সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর তারা কার্যত অবরুদ্ধ করে দেয় মিরপুর।

আন্দোলনে অংশ নেয়া মিরপুর কলেজের শিক্ষার্থী শাফিকুর রহমান মুগ্ধ বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবেই। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজ রাজপথে এ কারণে হয়তাবা সাধারণ মানুষের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে এতে আমরা দুঃখিত। তবে আমাদের এ আন্দোলন এ জন্য যে, সড়ক দুর্ঘটনায় যেন আর কোনো মাকে কাঁদতে না হয়।

উল্লেখ্য, ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির ফলে একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। একই ঘটনায় আহত হয় ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

এ ঘটনায় দিয়ার বাবা রোববারই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা