রাজধানীতে গাড়ি চলাচলে পরিবহন শ্রমিকদের বাধা

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ষষ্ঠ দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল করতে দিচ্ছেন না শ্রমিকরা। এতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুয়েকটি বিচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চললেও তা থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। এতে চরম দর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

মিরপুর সাড়ে ১১ তে পরিস্থান পরিবহনের একটি গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন ১০-১২ জনের এক দল শ্রমিক। এই প্রতিবেদককে তারা বলেন, মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছেন। কোনো গাড়ি চলতে দেয়া হবে না।

আব্দুল্লাহ নামের এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার মালিক সমিতি ধর্মঘট ডেকেছেন। কাজেই কোনো গাড়ি চলবে না।

মহাখালীতে যাবেন ফিরোজা বেগম নামের এক যাত্রী। তিনি মিরপুর ১০ এর গোলচত্বরে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে সিএনজি খুঁজছেন, তাও পাচ্ছেন না। এ দুর্ভোগে বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।

তবে মিরপুরের ডিসি (ট্রাফিক-পশ্চিম) লিটন কুমার সাহা বলেন, মালিক সমিতি এখনো ধর্মঘট ডাকেনি। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা ডাকতে চাইলে আমরা তাদের না করেছি। তবে বিচ্ছিন্নভাবে শ্রমিকরা গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে পারেন।

এদিকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ঘাতক চালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার ছুটির দিনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের পঞ্চম দিনে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দিনভর বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সড়ক আটকে রাখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। খুলনায় বিক্ষোভ চলাকালে গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চাওয়ায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাইভেট কার তুলে দেয়া হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশের এটিএসআইসহ ৭ শিক্ষার্থী আহত হন।

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢাকার রাজপথে তেমন গণপরিবহন দেখা যায়নি। দূরপাল্লার বাসও ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি।

গত কয়েক দিনের মতো বৃহস্পতিবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। ফলে এদিনও অচল ছিল ঢাকা।

বিক্ষোভের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা গাড়ির লাইসেন্স যাচাই-বাচাই করে। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে কাগজপত্র পরীক্ষা করে।

মন্ত্রী, এমপি ও সচিবের গাড়িচালকদের লাইসেন্স না থাকায় তাদের গাড়ি আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। পরে ছেড়ে দেয়া হয়। বিকালের দিকে আন্দোলকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে বেশকিছু যুবককেও লাঠি হাতে শিক্ষার্থীদের পেটাতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে যে যুবকরা শিক্ষার্থীদের মারধর করে, তারা ছাত্রলীগের কর্মী।

এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা।

এদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনাও ঘটে। এতে বেশ কয়েক শিক্ষার্থীসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রাস্তায় কোনো গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে। হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায় নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ।

এদিন ভাংচুরের ভয়ে দূরপাল্লার পরিবহনও চলাচল করতে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থাকবে। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।