শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শ্রমজীবীদের নাভিশ্বাস
নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তা আটকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যান চলাচলে স্থবিরতার পাশাপাশি স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা পড়েছে বিপাকে। মানুষের চলাচল, যানবাহন আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় কাজ কমে গেছে তাদেরও।
পরিস্থিতি আরও কয়দিন এভাবে চলতে থাকলে আর এতে যারা দিনে এনে দিনে খায় সেই মানুষদের চুলায় হাড়ি চলবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে রিকশা-ভ্যান, সিএনজি চালক এমনকি অ্যাপস ভিত্তিক শেয়ার রাইডি শেয়ারিং সেবা দিয়ে যারা সংসার চালান, তাদের আয়ের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
রাজধানীতে যারা হকারি করে ঝালমুড়ি, কেউ সেদ্ধ ডিম, কেউ বিভিন্ন ধরনের পানীয় আবার কেউ চা-বিস্কুট ফেরি করে বেড়ান তাদের অবস্থা আরো নাজুক। কারণ, তারা সাধারণত বাজার, স্কুল, বাস টার্মিনালের সামনেই বিক্রি করেন। কিন্তু এখন সেগুলোতে লোকজন নেই। বৈকালিক ভ্রমণেও মানুষ বের হচ্ছে না।
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিনই ব্যাপক ভাঙচুর চালায় সহপাঠীরা। আর পরদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিমানবন্দর সড়ক কার্যত দিনভর অচল করে রাখে ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা।
তারও পরদিন থেকে শিক্ষার্থীদের এই অবস্থান ছড়ায় নগরীর অন্যান্য অংশে এবং সেদিন থেকেই চলাচলে নেমে আসে স্থবিরতা।
এর মধ্যে ৩১৭টি বাস ভাঙচুর আর আটটি বাসে আগুন দেয়ার পর বাস মালিকরাও গণ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। পণ্যবাহী যানবাহনও কমে গেছে, বাজারে দেখা দিয়েছে মাছ আর সবজির ঘাটতি, বেড়ে গেছে দাম।
মোহাম্মদপুর এলাকার রিকশা চালক জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, তিনি গাজীপুর থেকে সপ্তাহ খানেক আগে রাজধানীতে এসেছেন। পরিবার নিয়ে শেখেরটেক এলাকায় উঠেছেন। কিন্তু এই অবরোধের কারণে তার ইনকাম একদমই নেই।
বাস নাই এই অবস্থায় বেশি ভাড়া আদায় করলেও আয় কম কেন- জানতে চাইলে শ্রমজীবী এই মানুষটি বলেন, ‘আগে রিকশার কোনো লাইন ছিল না আর সব গলিতে চালান যাইত। এহন সব রিকশা এক লাইনে চলতে হইতাছে। এর লাইগ্যা যাইতে সময় লাগতাছে অনেক বেশি। ভাড়া বেশি মনে হইতাছে, কিন্তু আমরা তো যেই সময় দুইটা ভাড়া পাইতাম, সেই সময় একটাও পাই না।’
আবার রাস্তায় মানুষ কম, এইডাও একটা কারণ। তাই দিন শেষে আমার আয় কম হইতাছে।’
মোহাম্মদুপর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ভ্যান চালক রমজান শেখের সঙ্গে। ভাড়া কেমন পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কৃষি মার্কেট থেকে ভ্যানে চাল নিয়ে শংকরে যাওয়ার কথা। এক ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে কেবল মোহাম্মদপুর আসলাম। ভাড়া যা ঠিক করেছি তাই দিবে মালিক। কিন্তু সময় বেশি লাগায় লস হচ্ছে।’
ফার্মগেট, ধানমন্ডি, কল্যাণপুর এলাকায় সব সময় হকারদের দোকান বেশি দেখা যায়। কিন্তু গত ছয় দিনে তাদের ফুটপাতে বসার প্রবণতা কমেছে। কারণ সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করেছে।
ধানমন্ডিতে আবদুল গফুরের তিন ছেলে মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে পাঁচজনের সংসার। প্রতিদিন সিগারেট ও চা বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ হয়। ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়ালেখা করে। কয়দিন ছাত্ররা রাস্তায় থাকার কারণে বেচাকেনাও অনেক কমে গেছে। বলেন, ‘এহন সংসার চালানো খুব কষ্ট হইতাছে। এমন চলতে থাকলে আমাগো মতো মানুষের মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
অ্যাপস ভিত্তিক শেয়ার রাইডিং পাঠাওয়ের এক চালক বলেন, ‘ভাড়া কম বেশি দুই রকমই হচ্ছে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে বা গাড়ির কাগজ ঠিকঠাক তারা সহজে বেশি বাড়া মারছে। কারণ অনেক রাস্তা ফাঁকা থাকছে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যেও। আর কিছু জায়গায় চেকিং হলে কাগজ, হেলমেট সব দেখালে তারা তো আর ঠেকাচ্ছে না। বাস চলাচল না করার কারণে অ্যাপসের ব্যবহার বেড়েছে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন