ঢাকায় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষের আগ্রহ কম কেন?
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফুটওভারব্রীজ আছে। কোথাও আছে আন্ডারপাস। কিন্তু এগুলো খুব একটা ব্যবহার হতে দেখা যায় না। এগুলো ব্যবহারের আগ্রহ কম কেন ?
নিপা সুতার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। প্রতিদিনই তাকে বাংলা মটর এলাকায় ফুট ওভারব্রীজ পার হতে হয়।
কথা হচ্ছিল তার সাথে। তিনি বলছেন, “সন্ধ্যার পর আরও লোকজন না থাকলে উঠতে ভয় লাগে। ওখানে হকাররা শুয়ে থাকে। মাদকসেবীরা থাকে। অনেক সময় ছিনতাই হয়। অনেক ওভারব্রিজে লাইট থাকেনা। আবার যেখানে ফুটওভারব্রীজ দরকার সেখানে হয়তো সেটি নেই”।
নিউমার্কেটসহ কয়েকটি জায়গার ফুটওভারব্রিজে বখাটেদের হাতে নারীদের হেনস্থা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় প্রতিনিয়ত।
ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক জনপথ বিভাগের আওতায় ফুটওভার ব্রিজ আছে প্রায় একশ। আর আন্ডারপাস আছে তিনটি।
এর মধ্যে ঢাকার ফার্মগেট, মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর কিংবা বনানীসহ কয়েকটি এলাকায় ফুটওভারব্রীজে রাস্তা পার হন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সে তুলনায় পান্থপথ কিংবা বেইলি রোডের ফুটওভারব্রীজ খুব একটা ব্যবহার হতে দেখা যায়না।
ঢাকার গুলিস্তান ও কারওয়ানবাজারের আন্ডারপাস দিয়ে বহু মানুষ যাতায়াত করেন ঠিকই, কিন্তু কাছের মূল সড়ক দিয়ে হেঁটে পার হওয়া পথচারীর সংখ্যাও তার তুলনায় কম নয়।
মুল সড়কেও আবার সিগন্যাল ও রোড সাইন নেই। তাই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
এর পরেও কেন ফুটওভারব্রীজ কিংবা আন্ডারপাস ব্যবহারে আগ্রহ কম?
এমন প্রশ্নের জবাবে একজন পথচারী বলেন, অনেক সময় ওভারব্রিজে ‘উল্টাপাল্টা লোকজন’ থাকে বলে নারী ও শিশুরা নিরাপদ বোধ করেনা।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, অনেকটা দুরে হওয়ার কারণে তারা ফুটওভারব্রীজ ব্যবহার না করে অনেক সময় হেঁটেই রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করেন।
বনানীর ফুটওভারব্রীজে সংযুক্ত করা হয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। কয়েক বছর আগেই আরও কিছু ওভারব্রিজে চলন্ত সিঁড়ির ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিলো বয়স্ক, নারী ও শিশু পথচারীদের সুবিধার্থে – যদিও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ড: আদিল মোহাম্মদ খান বলছেন, কোন ধরনের সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই তৈরি হচ্ছে বলে অধিকাংশ ফুটওভারব্রিজই শতভাগ কাজে লাগানো কঠিন।
তিনি বলেন, “কোথায় ফুটওভার ব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস দরকার সেটি যদি একটা পরিকল্পনা করা যেতো। ফুটওভার ব্রিজ এডহক ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। সেজন্য দেখা যায় এগুলো ইন্টারসেকশন থেকে অনেকটা দুরে করা হয়। আবার উচ্চতার কারণেও অনেকে উঠতে চান না – যেটি ডিজাইনের বিষয়”।
যদিও শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর ঢাকায় ফুটওভারব্রীজ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলছেন, ফুটওভারব্রীজগুলোর শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পথচারীদের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, “দু একটি ক্ষেত্রে এমন হয় যে পথচারীরা কোন ওভারব্রিজ কম ব্যবহার করেন। হয়তো মনে হয় – সেগুলো ওখানে না হলেও হতো ।কিন্তু পথচারীরাও নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার জন্য একটু এগিয়ে এসে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। আমরা তাদের সচেতন করারই কাজ করছি”।
প্রায় একই মত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদেরও।
তবে বিশেষজ্ঞ ড: আদিল মোহাম্মদ খান বলছেন শুধু ঢাকা নয়- নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের অন্য ঘনবসতিপূর্ণসহ শহরগুলোতে আন্ডারপাস ও ফুটওভারব্রীজ নির্মাণের ক্ষেত্রে এখন থেকেই সমন্বিত পরিকল্পনা নেয়া দরকার।
“তা না হলে হুট করে যেমন নির্মাণের প্রবণতা থাকবে তেমনি আবার ভেঙ্গে ফেলারও দরকার হবে – যেমন মেট্রো রেলে নির্মাণের কারণে হুমকিতে পড়তে পারে ঢাকার বেশ কিছু ফুটওভারব্রীজ ও ফুটপাথ” – বলেন তিনি।-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন