সাইনবোর্ড থেকে গাবতলী : ৩ ঘণ্টার পথ ৩০ মিনিটে!
‘সাইনবোর্ড থেকে গাবতলী যাইতে এখন সময় লাগে মামা আধা ঘণ্টা। একটানে যামুগা। তাড়াতাড়ি উঠেন মামা, আগে তো তিন ঘণ্টার নিচে যাওন যাইত না।’
সাইনবোর্ড থেকে গাবতলী যেতে এখন কতক্ষণ লাগে- জানতে চাইলে এভাবেই বলছিলেন সাইনবোর্ড-সাভার রুটে চলাচলকারী লাব্বাইক পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৫২১৫১) চালক মো. খোকন। বাসটি সাইনবোর্ড, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মালিবাগ, ফার্মগেট শ্যামলী-গাবতলী, হেমায়েতপুর হয়ে সাভার যায়।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানীর রাস্তা এখন ফাঁকা। চিরচেনা যান ও জনজটের রাজধানী শহর ঢাকা এখন ভিন্নরূপে। সড়কে চালাচলে বিড়ম্বনাহীন অনভ্যস্ততায় ভিন্ন আমেজে নগরবাসী। দেখতে না দেখতেই পথ ফুরিয়ে যায়। যেখানে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হতো।
গাড়িতে উঠে মোবাইলের স্ক্রিণে হাত বুলাতে না বুলাতেই হেলপারের ডাকে কারো কারো মৃদু হেসে বিস্ময়ভরা জিজ্ঞাসা- ‘চলে আসছি?’
ফার্মগেট থেকে এসে শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে নামেন ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ‘ফার্মগেট থেকে আসলাম মাত্র ২০ মিনিটে। এটা ভাবা যায়। আহা সারা বছর যদি এমন থাকতো।’
পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মেশকাত ট্রান্সপোর্টের বাসে চিটাগাং রোড থেকে মোহাম্মদপুর যেতেও এখন ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো লাগে। অন্য সময়ে লাগে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা।
নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে কলাবাগান রুটে চলাচলকারী মেঘলা ট্রান্সপোর্টের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪১৩০৪) হেলপার জানান, এখন ভুলতা থেকে কলাবাগান যাই ৪০ মিনিটে। আগে সময় লাগে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা।
রাজধানীর কোনো কোনো রাস্তায় বিরান ভূমির মতো নীরবতা। হঠাতেই দু-একটি যানবাহন এসে মহূর্তে ভেঙে দিচ্ছে সেই নীরবতা এরপরই আবার সব নিস্তব্ধ। ওয়ারী, জয়কালী মন্দিরের দিকে রাস্তাগুলোতে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
বুধবার দেশে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া সরকারি ছুটি শেষ হবে বৃহস্পতিবার। এরপর আবার শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। টানা পাঁচদিনের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, জনপথ মোড়, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, মতিঝিল, শাহবাগ, বাংলা মোটর, ফার্মগেট, মগবাজার, মালিবাগসহ রাজধানীর প্রায় সব সড়কে সাই সাই করে গাড়ি ছুঁটছে বাধাহীন। তবে ঈদ বখশিশের নামে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ।
এমন ফাঁকা ঢাকায় কেমন লাগছে- জানতে চাইলে রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক কাশেম আলী বলেন, ‘মামা, ভালোর সঙ্গে সঙ্গে আবার খারাপও লাগছে। জাম (ট্রাফিক জ্যাম) থাকলে একটু জিরাইয়া জিরাইয়া চালাইতে পারি। এহন আর মামা, পাও দুইডার জিরান নাই। রাস্তা এক্কেরে খালি।’
এদিকে গড়ির চাপ না থাকায় বিভিন্ন সিগন্যাল পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশদের বসে থাকতে দেখা গেছে।
ট্রফিক পূর্ব বিভাগের ডেমরা জোনের সার্জেন্ট চন্দন কুমার সিংহ বলেন, ‘এখন যানবাহন কন্ট্রোল করা লাগছে না। অটোমেটিক চলছে।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ী হচ্ছে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জায়গা। দূরপাল্লার বাস এখনও ঢাকায় প্রবেশ করা শুরু করেনি। মানুষ এখনও বাসে করে ঢাকা ছাড়ছে।’
চন্দন কুমার আরও বলেন, ‘সরকারি ছুটির পর ঢাকা ধীরে ধীরে আগের রূপে ফিরতে শুরু করবে। তবে পুরোপুরি আগের চেহারায় ফিরতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন