সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যেন না ছড়ায় : প্রধানমন্ত্রী

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কেউ যাতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

এ সময় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কমিটি ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রায় ৫ হাজার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের নেতাদের মধ্যে বিমল কান্তি দত্ত, গৌরাঙ্গ দে, দেবাশীষ পালিত, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, সুব্রত পাল, বিমল কান্তি দে প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভামঞ্চে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার উপস্থিত ছিলেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপানারা এদেশের সন্তান, এই মাটি আপনাদের। এখানে আমার-আপনার বলে আলাদা কিছু নেই। সবক্ষেত্রে আপনারা সমান অধিকার ভোগ করবেন, এটাই আমরা চাই।’

তিনি এ সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল বলেও দাবি করেন।

ওই হামলায় গুরুতর আহত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে গ্রেনেড মারা হয় যুদ্ধের ময়দানে, সেটিই মারা হয়েছিল আমাদের সমাবেশে। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট, তাদের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় ওই হামলা হয়েছিল। এছাড়া কোনো দিন এই ধরনের হামলা হতে পারার কথা না।’

তিনি বলেন, ‘শুধু এ ঘটনা নয়, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অসংখ্য হামলা হয়েছে। এমন কোনো হিন্দুবাড়ি ছিল না যেখানে আক্রমণ না করেছে। তারা কোনো কিছুই বাদ দেয়নি। তারা সকলের উপরেই আক্রমণ চালিয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুদের উপর বেশি করে অত্যাচার করেছে। ঠিক একইভাবে বাবরি মসজিদে যখন হামলা হয়, তখনো এখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার হয়েছিল।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্র— এগুলো যেন একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি, এই দেশে যেন শান্তি বজায় থাকে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেন ছড়াতে না পারে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যেন বাংলাদেশ গড়ে ওঠে। আর প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষ যেন তার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে এবং একটা সুন্দর পরিবেশে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে পারে— এই ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চেয়েছি।’

গত বছর সারাদেশের ৩৩ হাজার ৭৭টি মণ্ডপে দূর্গাপুজা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতো পূজা বাংলাদেশে অতীতে কখনো হয়নি। প্রতি মুহূর্তে পুজার সংখ্যা বাড়ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় এটাই চেষ্টা করি, সেটা হিন্দু ধর্ম হোক, খ্রিস্টান ধর্ম হোক, বৌদ্ধ ধর্ম হোক বা আমাদের মুসলমান ধর্ম হোক; প্রত্যেকটা উৎসব যেন একটা আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। কারণ, আমাদের স্লোগানই হচ্ছে— ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি ধর্মীয় উৎসবে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলেই কিন্তু এক হয়ে উৎসব উদযাপন করে, এই এরকম সুন্দর একটা পরিবেশ আমরা বাংলাদেশে সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপানারা এই দেশেরই মানুষ। এই দেশেরই সন্তান। এই দেশ আপনাদের। মহান মুক্তিযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। শহীদের রক্ত তো কোনো বাধা মানেনি। কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান, কে বৌদ্ধ, সেটা দেখেনি। সেই রক্ত একাকার হয়ে গেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কাজেই এই স্বাধীন বাংলাদেশ, এ বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যেন ছড়াতে না পারে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রতিটি মানুষ যেন তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারে এবং যার যার অধিকার যেন সবাই ভোগ করতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থাটাই করতে চেয়েছি।’