রোহিঙ্গা পোড়া আগুনে মুখ পুড়ছে না সু চির

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধন অভিযানের এক বছর পর আবারও আলোচনায় হোতাদের বিচার। মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সু চি বা সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিচার হবে কিনা সেই প্রশ্নই এখন আলোচনার শীর্ষে। শান্তির পায়রা, গণতন্ত্র রক্ষাকারী, মানবাধিকারের মূর্ত প্রতীক সু চির এমন নানা খেতাব থাকলেও সবাই এখন তার বিচার চান।

বিশ্ব সম্প্রদায় তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে দেখছে। তাকে আইনের ধারা-উপধারায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন আইনবিদরা। কিন্তু সব চেষ্টা রসাতলে। রোহিঙ্গা পোড়া আগুনে সু চির মুখ পোড়া দূরের কথা, ফোস্কাও পড়ছে না। তার বিচারের মুখোমুখি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বুধবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

সোমবার প্রকাশিত জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গা হত্যায় মিয়ানমার সেনাপ্রধানসহ ৬ জেনারেলকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। পাশাপাশি সু চি ভয়ংকর এ নিধনযজ্ঞে ইন্ধন জুগিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।

গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে এ হত্যায় মিন অং হ্লাইংসহ ৬ জেনারেলের বিচার করা উচিত বলে সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। সেখানে সু চিকে বিচারের আওতায় আনা হবে কিনা স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি জনাথন হেড বলেন, অং সান সু চির বিচারের মুখোমুখি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর আক্রমণের পরিকল্পনার বিষয়টি সরকার জানত এমন কোনো তথ্য জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আসেনি। সেখানে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা নিপীড়ন থামানোর জন্য সু চি তার ক্ষমতা ব্যবহার করেননি।

তবে ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে, স্বাধীন তদন্তকারীদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দিয়ে এবং সেনাবাহিনীর অন্যায়কে অস্বীকার করার মাধ্যমে সু চির সরকার রাখাইন অঞ্চলে অপরাধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছে। বিচারের ক্ষেত্রে মূল মনোযোগ দিতে হবে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর, কেননা তাদের অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ তদন্তে এসেছে।

জনাথন বলেন, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের ফলে সু চির ওপর সবচেয়ে খারাপ যে প্রভাব পড়তে পারে তা হল, তিনি এখন নিজেকে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের পাশে দেখতে পাবেন। কারণ তিনি রাখাইনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সেনাবাহিনীর বক্তব্যকেই সমর্থন জুগিয়ে এসেছেন। এতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার ভাবমূর্তির বারোটা বেজে গেছে।

বিবিসির জেনেভা প্রতিনিধি ইমোজেন ফুকস বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কিংবা অন্য কোনো ধরনের ট্রাইব্যুনাল ছাড়া কাউকেই দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব না। জাতিসংঘের প্যানেল কেবল তদন্ত করতে পারে, বিচার করার এখতিয়ার তাদের নেই।

তবে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন যে ধরনের তথ্য-প্রমাণের কথা বলেছে, তাতে মনে হয় কোনো না কোনোভাবে এর বিচার হতেই হবে, সেটা যত বছর পরই হোক না কেন। এর আগে মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নে সহযোগিতা কিংবা তা বন্ধে কিছু করতে না পারার অভিযোগে সু চি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারেন।