কি দিনকাল পড়ল রে বাবা, লজ্জা-শরম কিছু নাই নাকি!

মুর্শিদাবাদেরই জেলা প্রশাসন নবাবভূমিকে নির্মল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিষয়টি অবশ্য ‘হাগ’-এ শেষ নয়। একটা আ-কারও রয়েছে। আর বিড়ম্বনার শুরু সেখানেই!

টিভিতে ‘হাগ ডে’ শুনে আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকেছিলেন মুর্শিদাবাদের এক বৃদ্ধা। তার পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেছিলেন, ‘কি দিনকাল পড়ল রে বাবা! এখনকার ছেলেমেয়েদের লজ্জা-শরম বলতে কিছু নাই নাকি!’

বহু কষ্টে ওই বৃদ্ধাকে তাঁর সঙ্গীরা বুঝিয়েছিলেন, ‌’এই হাগের অর্থ অন্য দাদি। হাগ মানে জড়িয়ে ধরা।’ দাদির ছোট্ট প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘মরণ!’

শৌচাগার ছাড়া যাতে অন্য কোথাও কেউ ইয়ে না করে সেই জন্য সাতসকালে মাঠেঘাটে ছুটছেন বিডিও, ওসি। তৈরি হয়েছে ছোট ছোট দল। মাঠে একটু আড়াল খুঁজে কেউ হয়তো মাত্র বসেছেন। অমনি সেই দলের ছেলেরা বাজিয়ে দিল হুইসেল!

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, ‘এত কিছু করেও মাঠপ্রিয় লোকজনের স্বভাব কিছুতেই বদলানো যাচ্ছিল না। বাড়িতে শৌচাগার আছে। তবুও তিনি সেই শৌচাগারে যাবেন না।’

তাহলে?

প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঠিক হলো, প্রত্যন্ত গ্রামের লোকজনের সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়ে তাঁদের ভাষাতেই সচেতন করতে হবে। তৈরি হলো ফ্লেক্স, ফেস্টুন, লিফলেট। গ্রামে গ্রামে টানিয়ে দেওয়া হলো সেই সব সতর্কবার্তা।

পরিষ্কার বাংলায় লিখে দেওয়া হলো— খোলা জায়গায় ইয়ে করলে ১০০০ টাকা জরিমানা!

মাড্ডার এক যুবক জানান, ‘প্রশাসন তো এক দূষণ বন্ধ করতে গিয়ে এখন দৃশ্যদূষণ বাড়াচ্ছে।’ বেলডাঙার এক নারীর কথায়, কয়েকদিন পরেই পাত্রপক্ষ মেয়ে দেখতে আসবে। ভাবছি ওই দিনটার জন্য বাড়ির সামনের ওই পোস্টার কিছু দিয়ে ঢেকে দেব। ওদের চোখে এমন বিজ্ঞাপন পড়লে ওরা কী ভাববেন!’

বহরপুরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সুগত সেন জানান, ‘আরও অনেকভাবে বিষয়টি বোঝানো যেত। এমন ভাষা প্রশাসন না ব্যবহার করলেই ভালো হত।’

বেলডাঙা ১ বিডিও শুভ্রাংশু মণ্ডল জানান, ‘নানাভাবে সচেতন করেও মানুষকে এই পুরনো অভ্যাস থেকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই ওই ভাষা ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।’

তবে মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসক পি উলাগানাথন জানান, ‘বিডিওদের বলবো, এমন ভাষা যেন আর কেউ ব্যবহার না করে।’