রাশিয়ার বিশাল সামরিক মহড়ায় চীন কেন যোগ দিল?
রাশিয়ায় শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী বিশাল এক সামরিক মহড়া যা সোভিয়েত আমলের পর সবচেয়ে বড় সামরিক প্রদর্শনী।
এতে এই প্রথমবারের মতো চীনা সৈন্যরাও অংশ নিচ্ছে – যাকে দেখা হচ্ছে দুটো দেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসেবে।
সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনীর তিন লাখেরও বেশি রুশ সৈন্য এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই এই মহড়া চলছে পূর্ব সাইবেরিয়াতে।
রাশিয়া বলছে, দেশটির ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া যার নামকরণ করা হয়েছে ভস্তক-১৮। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে বড় ধরনের যেসব সামরিক মহড়া হয়েছে, এবারের তুলনায় সেগুলো কিছুই নয়।
পাঁচ দিনের এই সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে তিন লাখেরও বেশি সৈন্য, ৩৬ হাজার সামরিক যান, এক হাজারেরও বেশি যুদ্ধবিমান এবং আশিটির মতো রণতরী।
এছাড়াও রাশিয়া এই প্রথমবারের মতো এধরনের মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্যে সাবেক সোভিয়েত মিত্রদের বাইরের কোন একটি দেশ চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
রাশিয়ার উপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে যখন রাশিয়ার উত্তেজনা বাড়ছে ঠিক তখনই চীনা সৈন্যদের অংশগ্রহণে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোর একজন মুখপাত্র বলছেন, এই মহড়া প্রমাণ করছে বড় ধরনের সংঘাতের দিকে মনযোগ দিচ্ছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মস্কোর প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিও আগ্রাসনমূলক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ নয়।
আর সেকারণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শক্তিও দেশটির জন্যে অত্যন্ত জরুরী।
রাশিয়ার এই সামরিক মহড়ায় চীন কেন অংশ নিচ্ছে?
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নানা ধরণের নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলার জন্য তারা রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু এই সামরিক হুমকি কাদের দিক থেকে, সেটা পরিস্কার করে বলা হয়নি।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শুইগো অবশ্য বলেছেন, মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার জন্য বড় হুমকি হচ্ছে ইসলামী জঙ্গীবাদ।
পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতেই চীন এবং রাশিয়া নিজেদের মধ্যে সামরিক যোগাযোগ বাড়াচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের সঙ্গে এক বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত, তখন চীন আরও বেশি করে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে।
রাশিয়া এখন চীনে সবচেয়ে বেশি তেল সরবরাহ করে। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম এখন পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে চীন সীমান্ত পর্যন্ত তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এক গ্যাস পাইপলাইন তৈরি করছে।
রুশ নেতা মিস্টার পুতিনের সঙ্গে চীনের নেতা শি জিনপিং এর সম্পর্কও বেশ উষ্ণ। চীনের শি জিনপিং রুশ নেতা পুতিনকে তার সবচেয়ে ‘ভালো এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে রাশিয়ার এই বিশাল সামরিক মহড়ার ওপর সতর্ক নজর রাখছে নেটো জোট।
নেটোর এক মুখপাত্র বলেন, প্রত্যেক দেশের সামরিক মহড়া চালানোর অধিকার আছে, কিন্তু এটা করতে হবে স্বচ্ছভাবে।
২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তারপর থেকে নেটোর সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে।
ঐ ঘটনার পর নেটো রাশিয়ার প্রতিবেশী বাল্টিক দেশগুলোতে চার হাজার অতিরিক্ত সৈন্য পাঠায়।
অন্যদিকে রাশিয়া নেটোর এই পদক্ষেপকে সামরিক উস্কানি হিসেবে দেখছে।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন