ডিজিটাল আইনের খসড়া প্রত্যাখান সম্পাদক পরিষদের
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে তা প্রত্যাখান করেছে সম্পাদক পরিষদ। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বেগ এ প্রতিবেদনে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক বৈঠকে এ বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করে সম্পাদক পরিষদ।
বৈঠকের পর প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রতিবেদন আমরা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হচ্ছি। কেননা, খসড়া আইনটির ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারায় মৌলিক কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এই ধারাগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি। তবে ৩ নম্বর ধারার অধীন তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অন্তর্ভুক্তিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন (অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট) অন্তর্ভুক্ত করায় আমরা উদ্বেগ জানাচ্ছি। এটি আরটিআইয়ের সঙ্গে পরিষ্কারভাবে সাংঘর্ষিক।
এতে আরও বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পাদক পরিষদের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে তারা দুজনই সম্পাদকদের উদ্বেগ প্রশমনে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
সংসদীয় কমিটি সম্পাদক পরিষদ, বিএফইউজে ও অ্যাটকোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুবার বৈঠক করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে সম্পাদকেরা জানান, এসব বৈঠকে ওই খসড়া আইন কীভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কণ্ঠরোধ করে, তা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া খসড়া আইনের ওপর প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে সম্পাদকদের সঙ্গে সংসদীয় ওই কমিটির আরেকবার বসার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠক কখনও হলো না।
এতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন ও খসড়া ডিজিটাল আইনটি প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ-
১. এটি সংবিধানের ৩৯ (২) ক ও খ ধারায় দেয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তার পরিপন্থী।
২. এটি চিন্তার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারণার বিরোধী, যে স্বাধীনতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ।
৩. এটি গণতন্ত্রের মৌলিক চর্চারও বিরোধী, যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ সব সময়ই লড়াই করেছে এবং এর পাশে থেকেছে।
৪. এটি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক নীতিমালার বিরোধী, যার জন্য বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা লড়াই করেছেন।
বিবৃৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া যেন পাস না হয় সেজন্য সেই সংসদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সম্পাদকদের মতে, এ খসড়া আইন সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন নিউজ টুডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, দৈনিক আজাদি সম্পাদক এম এ মালেক, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, দ্য ইনডিপেনডেন্ট সম্পাদক এম শামসুর রহমান, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনিরুজ্জামান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন