বিচারপতি সিনহার বই নিয়ে যা বলছে আওয়ামী লীগ
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক আত্মজীবনীমূলক বইয়ে তাকে সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে হয়েছে – এমন দাবি করার পর সরকারের মন্ত্রীরা একে ‘কল্পনাপ্রসূত এবং মিথ্যা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ -নামের বইতে মি. সিনহা বর্ণনা করেছেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টিকে কেন্দ্র করে তার ওপর সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।
সংবিধানের ১৬শ সংশোধনী বাতিলের রায় পক্ষে নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে চাপ তৈরি করা হয়েছিল বলে বিচারপতি সিনহা যে অভিযোগ করেছেন, তা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম বিবিসিকে বলেন, বিচারপতি সিনহা নিজেই বিচারবিভাগ এবং সংসদের মধ্যে একটা সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন।
এছাড়া সরকারের চাপে তাঁর দেশ ছাড়ার অভিযোগ নাকচ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিদেশে থাকা সাবেক প্রধান বিচারপতির বই এবং তাঁর বক্তব্য নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিচারপতি সিনহার বই লেখার বিষয়কে ক্ষমতা হারানোর জ্বালার সাথে তুলনা করেছেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় যখন কেউ না থাকে, তখন অনেক অন্তর্জ্বালা, বেদনা থাকে। ক্ষমতা হারানোর জ্বালা থেকে বইটি লিখে মনগড়া কথা বলা হয়েছে বলে মি: কাদের মন্তব্য করেন।
বিচারপতি সিনহা’র অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে, তাঁকে অসুস্থ বানিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল।
একই সাথে তিনি সরকারের চাপ এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর হুমকির মুখে দেশ ছাড়ার যে অভিযোগ এনেছেন, এ সব অভিযোগ নাকচ করে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
“প্রথম কথা হচ্ছে যে, তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় নাই। তিনি আমার কাছে চিঠি লিখেছেন যে তিনি অসুস্থ। তাহলে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে তিনি যখন যেখানে প্রয়োজন, যে মিথ্যার আশ্রয় নিলে তাঁর পক্ষে হবে, তিনি ঠিক সেই মিথ্যার আশ্রয় নেন।”
“তখন তিনি আমার কাছে চিঠি লিখেছিলেন যে, তিনি অসুস্থ। সেই সব চিঠি আমার কাছে আছে। তো উনি এসব কথা বললেইতো আর এসবের জবাব দিতে হবে না।”
ডিজিএফআই এবং আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
এছাড়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পক্ষে নিতে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির যে অভিযোগ তুলেছেন বিচারপতি সিনহা, সেই অভিযোগে সরকারের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ. টি. ইমাম বলেছেন, বিচারপতি সিনহা নিজেই সংসদ এবং বিচারবিভাগের মধ্যে একটা সাংঘর্ষিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে তাঁরা মনে করেন।
মি: ইমাম বিচারপতি সিনহার লেখা বইয়ের নামকরণেরও সমালোচনা করেন। “ব্রোকেন ড্রিমটা জাস্টিস এস কে সিনহা’র নিজের। তার কিছু স্বপ্ন ছিল,সেই স্বপ্নগুলো পূরণ হয়নি, এটাই হলো তাঁর মানে স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস।”
মি: ইমাম বলেছেন, “এখন উনি যেগুলো বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে তাঁর রায় এগুলো নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তিনি তাঁর নিজের দিকটা একেবারেই আড়াল করে গেছেন।”
“প্রত্যেকটি জায়গায় বিচারপতি সিনহা’র অনধিকারচর্চা। এবং রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, প্রধান বিচারপতিরা অনেক সময় ভাল কথা বলেন। কিন্তু এই ধরণের একটা অবস্থান নেয়া, যে আমিই সব। আমিই সব করবো। দ্বিতীয় হলো, এতেও তো হচ্ছে না। অতএব আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে হবে, তার পিছনে এই অর্থনৈতিক যতকিছু কর্মকাণ্ড। সবকিছু মিলিয়েই এই পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”
সরকারের অনেকে এখন আবার বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে সামনে আনছেন।
তবে তিনি বইতে লিখেছেন এবং বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি তাঁকে না জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ অন্য বিচারপতিদের কাছে তুলে ধরে ধরেছিলেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।
“এটাই যদি তিনি বলে থাকেন এবং লিখে থাকেন, তাহলে তিনি সর্বৈব মিথ্যা লিখেছেন। তাঁর কল্পনাপ্রসূত কথাবার্তা লিখেছেন। যারা অন্যান্য মাননীয় বিচারপতি আছেন এবং ছিলেন তখন। তাঁরা কিন্তু কেউই নাবালক নন। কথা হচ্ছে, কোনো চাপ দেয়া হয় নাই। এবং উনি যে রায় দিতে চেয়েছিলেন, সেই রায়ই কিন্তু দিয়েছেন। সেই কথাটাই আমি উল্লেখ করছি এবং সে জন্যই বলছি, তিনি যা লিখেছেন, সেটা সর্ববৈ মিথ্যা।”
তবে বিচারপতি সিনহা তাঁর বইয়ে বা বক্তব্যে যে সব অভিযোগ তুলেছেন, সেগুলো সরকারকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। তারা বলছেন, এটা সরকারের জন্য নেতিবাচক হতে পারে। কিন্তু এইচ. টি. ইমাম মনে করেন, এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
“তাঁর সম্পর্কে ,তাঁর যে বিশাল চারিত্রিক দুর্বলতা,তাঁর দুর্নীতি ইত্যাদি মানুষের মুখে মুখে। সবাই তা জানেন। সেজন্য আমার মনে হয় না, এটা কোনো প্রভাব ফেলবে।”
বিচারবিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রশ্নও বিশ্লেষকদের অনেকে তুলছেন।
তা মানতে রাজি নন আইনমন্ত্রী। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, বিচারপতি সিনহার কর্মকাণ্ডই, তাঁর ভাষায়, বিচারবিভাগকে কলুষিত করেছে।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন