ভাসানচর প্রায় প্রস্তুত, কিন্ত সেখানে যেতে চান না রোহিঙ্গারা
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করলেও রোহিঙ্গারা জানাচ্ছে তারা সেখানে যেতে একেবারেই প্রস্তুত নয়।
জানা যাচ্ছে ভাসানচরে বেড়িবাধ নির্মাণ, ঘরবাড়ি, সাইক্লোন শেল্টারসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সরকার এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করতে চাইছে।
অথচ কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা কোনোভাবেই এখন সেখান থেকে সরতে চান না।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, ভাসানচরে স্থানান্তরের আগে কারিগরি মূল্যায়ন শেষে রোহিঙ্গাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় এ নিয়ে তাদের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা বেশিরভাগই যে নামটির সঙ্গে পরিচিত সেটি ঠেঙ্গার চর।
ভাসানচরে যেতে চায় কিনা – এমনটি জানতে চাইলে নূর বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, “আমরা এখানে যেভাবে আছি ভাল আছি যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নাই। শুনেছি তিনঘণ্টা লঞ্চে যেতে হয়। সাগর আছে। আমাদের ভয় করে।”
ক্যম্পে বসে সালমা খাতুন বলছিলেন, “আমরা মা-বোনদের মধ্যে একটু একটু আলোচনা হয়। আমরা যাব না। এখানে থাকবো। কোত্থাও যাব না।”
কেন যেতে চান না সে প্রশ্নে সালমা বলেন, “বার্মার থেকে আসার পর এইখানে আমাদের ভাল লাগে। আমরা এইখানে সয়ে গেছি। অতদূর আমরা যাব না। অনেক দূর। বোটে করে যেতে হয় তিন ঘণ্টা।”
বয়স্ক আজিম উদ্দীন জানান এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন, “কিছু মানুষ বলছে আমরা ওই জায়গা চিনি না। পানি উঠে ডুবে যাবে কিনা। সুবিধা হবে হবে নাকি অসুবিধা হবে? এসবতো আমাদের জানা নাই।
রোহিঙ্গারা কী চাইছে এ প্রশ্নে আজিম উদ্দীন বলেন, “এখান থাকবে, না হয় এখান থেকে নিজের দেশে চলে যাবে। এটাই ইচ্ছা”
কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের একটি ব্লকের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, “আমাদের ভাল জায়গায় নিয়ে গেলে আমরা যেতে রাজী আছি। ঠেঙ্গার চরে যেতে রাজী নই।”
ক্যাম্প মাঝিদের একজন নেতা মো: রফিক জানান, প্রশাসনের লোকজন ক্যাম্পের মাঝিদের সঙ্গে একদফা আলাপ করেছিল ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে। তাদের একটি তালিকা করারও কথা বলা হয়েছিল কিন্তু সেটি আর পরে এগোয়নি।
রফিক বলেন, “প্রথমে আমাদের দেখতে হবে ওই জায়গাটা কিরকম। কন্ডিশনটা কি। যারা রিসার্চার আছে তারা কী বলতেছে ওই জায়গাটার ব্যাপারে। সবাই যদি ডিসিশন দেয় যে ওই জায়গাটায় ভাল মতোন থাকা যায়, আবহাওয়াটা ভাল, লোকগুলো সুস্থ ভাবে থাকতে পারবে। তাহলে কোনো সমস্যা নাই – লোকগুলো চলে যাবে।”
সরকারি হিসেবে কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে আসা নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। এই রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসনসহ সার্বিক ত্রাণ তৎপরতা রয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।
তিনি জানিয়েছেন, “ভাসান চরে শরণার্থীদের স্থানান্তরের পূর্বে এর সম্ভাব্যতা ও আকাঙ্খা যাচাই করতে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দ্বারা স্বাধীন কারিগরি এবং সুরক্ষা মূল্যায়ন করা উচিত।”
“এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সেখানকার নিরাপত্তা, বাসযোগ্যতা এবং এক লক্ষ শরণার্থী পরিবহন এবং সেখানে বসবাসের কী প্রভাব হবে সে বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে” – বলছিলেন তিনি।
জাতিসংঘ আরো মনে করে, স্থানান্তরের আগে এ মূল্যায়ন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করতে হবে – যাতে তারা সেখানে যাবে কিনা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে কক্সবাজারের অবস্থিত রোহিঙ্গা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, “তাদেরকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার মূল কাজটি শুরু করার আগে আমাদের এরকম একটি পরিকল্পনা আছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও নির্দেশনা আছে যে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য মাঝিদের একটি নির্বাচিত দলকে আমরা সেখানে নিয়ে যাব।”
“তারা নিজেরা সেখানে সরেজমিনে দেখে আসবেন এবং সেখানের পরিস্থিতি সুযোগ সুবিধা দেখে আমরা বিশ্বাস করি যে তারা নিজেরাই যেতে আগ্রহী হবে।”
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন