ক্যান্সার ঝুঁকিতে দেশের ৬ কোটি নারী
দেশের ৫ কোটি ৮৭ লাখ নারী কোন না কোন ভাবে ক্যান্সার ঝুঁকিতে রয়েছেন। শুধুমাত্র সারভাইক্যাল ক্যান্সারে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং এদের মধ্যে ৬ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটে।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘ক্যান্সার সচেতনতা মাস ২০১৮, উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ তথ্য জানান।
আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ইহতেশামুল হক।
এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন আরও দুই লাখ মানুষ। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন আরও দেড় লাখ মানুষ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৃত্যুর ষষ্ঠ প্রধান কারণ ক্যান্সার।
পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে পুরুষদের ২৩ দশমিক ৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর, ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ মুখ গহ্বর এবং ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
অন্যদিকে নারীদের ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ স্তন ক্যান্সার, ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ জরায়ু ও জরায়ুমুখ এবং ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত।
তিনি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি দশ লাখ লোকের জন্য একটি ক্যান্সার সেন্টার থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি সেন্টারে অন্তত দুটি রেডিওথেরাপি মেশিন থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে দেশে অন্তত তিনশটি রেডিওথেরাপি মেশিন থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে আছে মাত্র ১৭টি মেশিন আর ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ১৫০ জন। যা দেশের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় খুবই অপ্রতুল।
সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস এণ্ড গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আব্বাসী বলেন, দেশে নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা অনেক বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশের প্রায় ৫ কোটি ৮৭ লাক্ষ নারী কোন না কোন ভাবে ক্যান্সার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী সারভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরমধ্যে ৬ হাজার রোগী এ রোগে প্রাণ হারান।
তিনি বলেন, আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসা নিতে আসেন অ্যাডভান্স স্টেজে। ফলে চিকিৎসা তাদের সুস্থ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার একটি ব্যাথাহীন রোগ। তাই রোগীরা এটাকে গুরুত্ব দেয় না। তিনি এ দুটি ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
হেড-নেক ক্যান্সার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা বলেন, অপুষ্টির কারণে অনেকের মুখে লাল বা সাদা ঘা হয়। এসব ঘা যদি দুই থেকে তিন সপ্তাহের বেশি থাকে তাহলে সেগুলো থেকে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া গলা ও জিওভা ক্যান্সার সৃষ্টিতে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফুসফুস ক্যান্সারের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিনুল হক বলেন, ফুসফুস ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ সবসময় অল্প অল্প জ্বর অনুভব করা। এছাড়া গলার স্বর পরিবর্তন হলে এবং তা যদি আদা, গরম পানি গারগিল করার পরেও না ঠিক হয় তাহলে সেটিও ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ। এছাড়া বয়স্ক লোকদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে কাশি থাকা এবং কাশি দিলে শরীরের কোন বিশেষ স্থানে ব্যথা অনুভুত হওয়া ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন সার্জারী বিভাগের অধ্যাপক ডা. মীম নাসিম সোবহানি খন্দকার, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আতিকুর রহমান, সার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাফিসা প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন