প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব কোটা বাতিলের সুপারিশ অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। শিগগির এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চারকিরে শতভাগ নিয়োগ হবে শতভাগ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে আগের নিয়মেই কোটা থাকবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার/বাতিলে’ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব তোলা হয়।
এই প্রস্তাতে তিনটি সুপারিশ ছিল। ১. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, ২. কোটা বাতিল এবং ৩. কোটা বাতিলের ফলে বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর বিষয়ে যথাপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এই দিনটি সুপারিশই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এক প্রশ্নে সচিব জানান, দুই-তিন দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সরকারি চাকরিতে বাংলাদেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনিদেরকেও দেয়া হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়।
তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়রিতে শুরু হয় আন্দোলন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানায়।
গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন কোনো কোটা থাকবে না। তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন।
২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মামনুন রহমান এবং বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের এই রায়ে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ (কোটা) অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।’ রায়ে আরও বলা হয়, ‘কোনো ক্ষেত্রে কোটা পূরণ যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে পদ খালি রাখতে হবে।’
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায়ের পর্যবেক্ষণের কিছু অংশ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দেয়। আপিলের রায়েও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের (কোটা) বিষয়টি বহাল রাখা হয়।
তবে কোটা নিয়ে সুপারিশ দিতে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন হয়। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারার পর তিন মাস সময় বাড়ানো হয়।
পরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ তারা চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জমা দিয়েছেন। সেই সুপারিশে শেখ হাসিনা সায় দেয়া পর আজ তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন