চাকরিতে কোটা : যে পাঁচটি তথ্য আপনি জানতে চাইবেন

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে (যেসব পদ আগে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি বলে পরিচিত ছিল) কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছে দেশটির সরকার।

বুধবার এ সংক্রান্ত একটি সচিব কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে দেশটির মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ এখন থেকে এসব পদে নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। তবে নিচের পদগুলোয় আগের মতোই কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। পাশাপাশি কর্পোরেশন বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলো নিজেদের বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে পারবে।

এদিকে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের কয়েকটি সংগঠন।

সবমিলিয়ে কোটার বিষয়টি কি দাঁড়াচ্ছে?

আসুন সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক:

১. কোটা ব্যবস্থা কি পুরোপুরি বাতিল?

বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, এখন থেকে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে আর কোন কোটা ব্যবস্থা থাকছে না। অর্থাৎ আগে যা প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি বলে পরিচিত ছিল, সেখানে কোটার ভিত্তিতে কোন নিয়োগ হবে না।

তবে তৃতীয় শ্রেণী ও চতুর্থ শ্রেণী পদের চাকরিগুলোয় আগের মতোই কোটা ব্যবস্থা থাকছে, সেখানে পরিবর্তনের কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি।

তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আগের মতোই কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকছে।

সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আকবর আলি খান বলছেন, ”তৃতীয় শ্রেণীর এবং চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে মেধা নির্ধারণ করা অত্যন্ত শক্ত। কারণ সেখানে কাজগুলো হলো অদক্ষ কাজ, তাদের নির্বাচন করার সময় মেধার মূল্যায়ন করা অত্যন্ত শক্ত। সুতরাং সেখানে কোটা থাকা বা না থাকায় খুব একটা তফাৎ হয়না। সুতরাং সেখানে কোটা থাকলেও তার কোন প্রভাব পড়বে না।”

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাহসী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন মি. খান।

২. কবে থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে?

মন্ত্রিসভা এই সুপারিশ অনুমোদন করা মানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে পরিপত্র জারি করেছে তাতে বলা হয়েছে, ৯ম (পূর্বতন ১ম শ্রেণি), ১০ম ও ১৩তম (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) গ্রেডের ক্ষেত্রে সরাসরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে।

নবম (পূর্বতন ১ম শ্রেণি), ১০ম ও ১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) ক্ষেত্রে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলো।

এসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

৩. কোটা ব্যবস্থা কি পুনরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব?

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন, সরকার চাইলে আবার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এখনকার প্রক্রিয়াগুলোই অনুসরণ করতে হবে।

অর্থাৎ সচিব কমিটিকে পুনরায় পর্যালোচনার দায়িত্ব দিতে হবে, তাদের সুপারিশ মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন এবং অনুমোদন হতে হবে। এরপর পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করে কোটা ব্যবস্থা বহাল করতে হবে। অর্থাৎ পুরোটাই নির্ভর করবে সরকারের ইচ্ছার ওপরে। তবে চাইলে সরকার এই কমিটি পুনর্বিন্যাস করতে পারে।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বুধবার গণভবনে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ”যদি কারও কোটা চাই, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখা হবে কী করা যায়। এরপর যদি কেউ কোনো কোটা চায়, তাহলে তাকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোটা দেব না।”

কোটা বহালের দাবিতে বুধবার রাত থেকেই ঢাকার শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের কয়েকটি সংগঠন। তাদের দাবি, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

সরকারি চাকরি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে যে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ থাকে। এখন থেকে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর পদে এই কোটার সুবিধা থাকলেও, ওপরের পদগুলোয় আর সুবিধাটি থাকছে না।

সাবেক সচিব আকবর আলি খান বলছেন, ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় বা সরকার মনে করে যে, কোন কোটার দরকার, তাহলে সরকার যেকোনো সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোন কিছুই চিরন্তন নয়, সরকার পর্যালোচনা করে যেকোনো সময় কোটা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৪. যেসব চাকরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে কী হবে?

সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলছেন, যেসব নিয়োগ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোটার ব্যাপারে সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেভাবেই কার্যকর হবে। অর্থাৎ সেখানে আর কোটার ব্যাপারটা থাকবে না।

যেমন গত সেপ্টেম্বরে জারি হওয়া ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলারে কোটার উল্লেখ থাকলেও, সেখানে ১৮ (চ) শর্ত রয়েছে যে, ”বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ/পদসমূহের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়নের সময় সরকারের সর্বশেষ কোটা নীতি অনুসরণ করা হবে।”

সরকারি কর্ম কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এর মধ্যে যেসব নিয়োগে এই শর্তটি উল্লেখ করা হয়নি বা নিয়োগ শেষের দিকে রয়েছে, সেখানে নতুন কোটানীতি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু যেসব নিয়োগ বিজ্ঞাপনে এই শর্তটি উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে নতুন কোটা নীতি অনুসারে নিয়োগ হবে।

৫. কোটায় কি এখনো নিয়োগ হওয়ার সুযোগ থাকছে?

প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার বিধিমালায় এ ধরণের কিছু নিয়োগের শর্ত রয়েছে।

কোটা বাতিল হলেও এসব ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগের সুবিধা থাকছে। যেমন পিএসসি ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, কর্পোরেশনে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিজেরা নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাদের বিধিমালা অনুসারে কোটার বিধান থাকলে, সেটি তারা অনুসরণ করতে পারবে।

সেসব নিয়োগ এই কোটার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে বলছেন সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলছেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ কারো কারো এখনো কোটার বিষয়ে বক্তব্য আছে। কোটার অন্যান্য বিকল্পও আছে। যদি সরকার মনে করে যে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বা প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটার প্রয়োজন আছে, তখন সরকার যেকোনো সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

-বিবিসি বাংলা