তারেকের ফাঁসি চেয়ে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা থেকে ঘুরিয়ে বিচারিক আদালতে রায় পাওয়ায় একদিনে সন্তুষ্ট রাষ্ট্রপক্ষ, আবার তাদের মধ্যে আক্ষেপও রয়ে গেছে। বিশেষ করে এই মামলায় ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উঠে আসা বিএনপি নেতা তারেক রহমানের ফাঁসির আদেশ না পাওয়ায় পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
বুধবার ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুসহ ১৯ জনের ফাঁসি এবং তারেক রহমান, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীব কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
বাকি ১১ আসামির সাজা হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। আর বাকি তিন আসামি জামায়াত নেতা আলী আসহান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তার সহযোগী বিপুল আগেই ফাঁসিতে ঝুলেছেন অন্য মামলায়।
আদালত রায় ঘোষণার পর গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি জানান, এই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে তারেক রহমানের বিষয়টি আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে। তার পরেও তার ফাঁসির আদেশ না আসায় তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় চালানো গ্রেনেড হামলায় ২৩ জনকে হত্যা এবং কয়েকশ মানুষকে আহত করার ঘটনায় মামলা হয়েছিল দুটি। একটি হত্যা মামলায় এবং একটি বিস্ফোরক আইনে। আইনজীবী কাজল জানান, দুটি মামলাতেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তারেক রহমানের। তবে তারা মনে করেন, ফাঁসির দণ্ডই হওয়া উচিত ছিল বিএনপি নেতার।
প্রত্যাশিত দণ্ড পেলেন না- এখন পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে আইনজীবী কাজল বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতে যাব, যে আইনজীবীরা আছেন, তারা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা মনে করি, তারেক রহমানের ফাঁসি ছাড়া এই দণ্ড পূর্ণাঙ্গ হয় না।’
‘তারেক রহমান যে অপরাধটা করেছেন, তিনি দুইবার যাবজ্জীবনে দণ্ডিত হয়েছেন। আমরা ফাঁসির বিষয়টা পর্যালোচনা চাইব।’
আইনের দৃষ্টিতে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড-দুটিই সর্বোচ্চ সাজা। তারেক রহমানকে মৃত্যুদণ্ড না দিয় কেন যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিচারক কোনো ব্যাখ্যা দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে কাজল বলেন, ‘পুরো জাজমেন্ট পাইনি। কেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, কেন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি, সেটা নিশ্চয় জজ সাহেব জানাবেন। আমরা রায় পর্যালোচনা করব।’
হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী থাকা বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে আদালত কোনো মন্তব্য করেছে কি না- জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘আমরা এখনও পুরো রায়টি পাইনি। যতটুকু শুনেছি, তাতে কিছু বলা হয়নি।
এই রায়ে তবে কেমন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘যারা শাস্তি পেয়েছেন, সে জন্য এই মুহূর্তে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি। মামলাকে ভিন্নখাকে প্রবাহিত করার যে চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটা দূর হয়েছে।’
এই মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানসহ দণ্ডিত ১৮ জনই পলাতক। আইনজীবী কাজল মনে করেন এই দণ্ড ঘোষণা হওয়ায় তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা সময়ের ব্যাপার হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন