ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারের দাবার ঘুঁটি?
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া কবে বা কীভাবে শুরু হবে সেনিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই পাঁচজনের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে সেদেশের সরকারি গণমাধ্যম।
কক্সবাজারের স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় সেখানকার বালুখালি ক্যাম্পে থাকা ঐ পরিবারটি প্রত্যাবাসনের সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় বাসিন্দা বা শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গা নেতাদেরও এবিষয়ে কিছু জানাননি।
কীভাবে ফিরে গেল পরিবারটি?
কক্সবাজারে শরণার্থী , ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বিবিসিকে জানান স্বেচ্ছায় এবং স্ব-উদ্যোগে কেউ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাইলে সেবিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই তাদের সামনে।
মি. আবুল কালাম বলেন, “কেউ যদি আমাদের না জানিয়ে স্বেচ্ছায় চলে যেতে চায় তাহলে আমাদের সেখানে কিছু বলার থাকে না।”
মি. আবুল কালাম নিশ্চিত করেন এই পরিবারটির প্রত্যাবাসন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে হওয়া এবং আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে এই পরিবারের ফিরে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
বালুখালি ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিসও জানান তাদের সাথে আলোচনা না করেই ঐ পরিবারটি ক্যাম্প ছেড়ে যায়। তার ধারণা সীমান্ত পার করার পর মিয়ানমার সীমান্তের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সহায়তা করেছেন রাখাইনে পৌঁছাতে।
মি. ইদ্রিস জানান মিয়ানমার যাওয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে তাদেরকে কিছু না জানালেও শরণার্থী ক্যাম্পে ঐ পরিবারটির প্রতিবেশী যারা ছিল, যাওয়ার আগে তাদের সাথে কথা হয়েছিল পরিবারটির।
তারা বলেছিল রাখাইনে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরে যাচ্ছেন তারা।
তবে মি.ইদ্রিস বলেন ঐ পরিবারটি ফিরলেও শরণার্থী শিবিরের অন্যান্য রোহিঙ্গা পরিবার এখনো মনে করে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া তাদের জন্য নিরাপদ নয় এবং নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যেতে চায় না।
অপপ্রচারে মিয়ানমারের কী লাভ?
একটি পরিবারের রাখাইনে ফেরত যাওয়ার বিষয়টিকে ফলাও করে প্রচার করার পেছনে মিয়ানমারের কূটনৈতিক স্বার্থ রয়েছে বলে মনে করেন একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা।
“আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সীমান্তের ওপারে যাওয়া-আসা সারাক্ষণই হচ্ছে। অনেকেই ওপারে গিয়ে বাড়িঘর কেমন আছে দেখে আবার ফিরে আসে।”
মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অভিযোগ ভুল প্রমাণ করতে এর আগেও মিয়ানমার এধরণের সংবাদ প্রচার করেছে।
“আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বিতারিত করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।”
মেঘনা গুহঠাকুরতা মনে করেন রোহিঙ্গাদের কয়েকটি পরিবারকে ফিরিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফলাও করে প্রচার করে বার্তা পাঠাতে চায় যে রোহিঙ্গারা নিজেরাই ফেরত আসছে এবং তাদের দেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অবস্থা রয়েছে।
তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করতে চায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ শুরু করার উদ্দেশ্যে এবছরের শুরুতে প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেয়া হলেও, এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি তার।
-বিবিসি বাংলা
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন