সুষ্ঠু নির্বাচনের আভাস দেখা যাচ্ছে না : বিশিষ্টজনেরা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন আভাস দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। নির্বাচনের আগে যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার তা এখনও হয়নি বলে মনে করেন তারা।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা মুখ্য বলে মনে করেন বিজ্ঞজনেরা। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ব মুহূর্ত কতটুকু নির্বাচন উপযোগী’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ‘দি ঢাকা ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি নির্ণয় করে বলা যায়, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

না। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

ইভিএম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম চালু করতে চায়। কিন্তু ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোটিংব্যবস্থা হবে না।’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘সরকার বলছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। কিন্তু না, সংবিধানের ১২৩ ধারার ৩ খ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে সরকার ইচ্ছা করলে সংসদ বাতিল করতে পারবে।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পূর্বশত দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। গায়েবি মামলা দিয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বিরোধী দলকে হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারি দল অবাধে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করে যাচ্ছে, কিন্তু বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’

‘গত দশ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট প্রয়োগ করতে না পারলে আগামী ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারবে না।’

বর্তমান সরকার জনগণবিরোধী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে। তাই তখন জনগণের বিভিন্ন

দাবি-দাওয়া অনুসরণ করতো। কিন্তু ২০২৪ সালে ভোটারবিহীন সংসদ গঠন করার কারণে জনগণের অধিকারের দিকে খেয়াল রাখছে না।’

‘আজকে প্রকাশ্যে যারা অপরাধ করে তাদের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু নাশকতার আশঙ্কায় বিরোধী দলকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই ঐতিহ্যের দিকে লক্ষ করে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলি ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বাভাস এখনও দেখা যাচ্ছে না। তফসিল ঘোষণার পর পক্ষপাতি ভূমিকা পালন করা যাবে না। তাই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সৌদি যুবরাজের মতো দেশ চালানো হচ্ছে। কথা বলার অধিকার

কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সন্ত্রাস পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকার জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করছে। নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেঁধে দিয়েছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে বিরোধী দলের ওপর দমননীতি পরিহার করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, এফ এ শামিম আহমেদ, ইখতেখার করিম, মাসুদ আজিজ প্রমুখ।