ঐক্যফ্রন্টের আড়ালে তারেকের নেতৃত্বের বৈধতার চেষ্টা!
বাংলাদেশে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির যোগদান এবং এর মধ্য দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হওয়ার ঘটনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে ভারত। তবে এই পদক্ষেপের আড়ালে লন্ডনে স্বেচ্ছানির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দলের রাশ নিজের হাতে রাখার সুচতুর চেষ্টা আছে বলেও ধারণা করছে তারা।
ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীগুলো নিজদের স্বার্থেই তারেক রহমানের গতিবিধি ও রাজনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নজর রাখে। তারেক গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে কাটাচ্ছেন।
সেই গোয়েন্দা সূত্রগুলোই মনে করছে, যেভাবে ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টের ছাতার তলায় বিএনপি নির্বাচনে যেতে রাজি হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে তারেক রহমান কিছুতেই চাইছেন না তার দলের নিয়ন্ত্রণ জিয়া পরিবারের হাতের বাইরে যাক।
এমনই একটি সূত্রের ভাষ্য, ‘ধরুন, খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ও তারেক রহমান লন্ডনে, সেই পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে ভালো করলো। আর জিতে গেলে তো কথাই নেই, তখন তো তাকে প্রধানমন্ত্রী করারও দাবি উঠতে পারে।’
ওই সূত্র বলছে, ‘এই ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যই আগেভাগে ঐক্যফ্রন্টের তাস খেলে রাখলেন তারেক রহমান। তাতে বিএনপি ভালো করলেও বলা যাবে, মির্জা ফখরুলের বা কারও একক নেতৃত্বে নয়, জোট হিসেবে লড়াই করেই দল ভালো করেছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্ন এলেও এগিয়ে দেওয়া যাবে ড. কামাল হোসনের নাম!’
সূত্রমতে, তারেক রহমানের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যে বিশেষ মধুর নয়, তা কোনও গোপন কথা নয়। তারেক বিশেষ পছন্দ করেন না বলেই বছরের পর বছর ধরে তাকে ‘ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক’ পদে থাকতে হয়। পরে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে ওই পদে স্থায়ী করতে হয়েছে।
ওই সূত্র আরও বলছে, এখন ভোটে বিএনপি ভালো ফল করলে সেই মির্জা ফখরুলের হাতেই দলের নেতৃত্ব চলে যেতে পারে, তারেক রহমানের এই আশঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে হয়তো সুদূর লন্ডনে বসে তিনি শুধু কাগজেই দলের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ রয়ে যাবেন, কিন্তু দলের রাশ চলে যাবে জিয়া পরিবারের বাইরে।
‘এ কারণেই আমাদের সন্দেহ, সুপরিকল্পিতভাবে ড. কামাল হোসেনের মতো একজন দুর্বল গণভিত্তির নেতার নেতৃত্বকে মেনে নিয়েও বিএনপি জোট গড়ার রাজনীতিতে শামিল হয়েছে। আর এই পুরো কাজটা করা হয়েছে তারেক রহমানের নির্দেশেই’, বলছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় ওই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এই মূল্যায়ন নির্দিষ্ট মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছেও।
দিল্লিতে স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস’-এর ফেলো ড. শ্রুতি পট্টনায়ক এ বছরের গোড়ার দিকে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। খালেদা জিয়া যখন জেলে ও তার ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে,তখন নির্বাচনের বছরে বিএনপির ওপর জিয়া পরিবারের রাশ বজায় রাখা যে সহজ হবে না, সেই পূর্বাভাসই করেছিলেন তিনি ‘বিএনপি কি তাদের নেতৃত্বের সংকট অতিক্রম করতে পারবে’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে।
সেই ড. পট্টনায়কই এদিন বলেন, ‘আজ ১০ বছর পরেও তারেক রহমান যে দলের কর্তৃত্ব অন্য কারও হাতে একইঞ্চিও ছাড়তে রাজি নন, সেটা স্পষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘তার (তারেক) প্রতিটি পদক্ষেপেই এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা থাকে যে বিএনপিতে কোনও বিকল্প মুখ যেন কোনোভাবেই মাথা চাড়া দিতে না পারে। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্যেও অবশ্যই সেই চেষ্টার প্রতিফলন আছে।’
ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে দীর্ঘদিন কাজ করে এসেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এ গাঙ্গুলি।
তিনি জানান, তারেক রহমানের অতীত ট্র্যাক রেকর্ড এমনই যে তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারে না।
এ গাঙ্গুলি বলেন, ‘করাচির এমকিউএম নেতা আলতাফ হোসেন একসময় লন্ডনে বসেই শক্ত হাতে পাকিস্তানে নিজের দল চালিয়েছেন বছরের পর বছর। তারেক রহমান সেই ধাতুর রাজনীতিবিদ মোটেও নন, তবে বিএনপির ফার্স্ট ফ্যামিলির প্রতি দলের নেতাকর্মীদের প্রশ্নহীন আনুগত্য তার কাজ কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়েছে।’ এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের কথায়, ‘তবে বাংলাদেশে ভোটের বছরে সেই সমীকরণে অনেক ওলট-পালট হতেই পারে। আর সেটা আঁচ করেই তারেক রহমান এবারে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। বিএনপিকে ঠেলে দিয়েছেন একরকম যৌথ নেতৃত্বের হাতে।’-প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন