ধানের শীষের অর্ধশতাধিক প্রার্থীর ওপর হামলা

ভোট উৎসবের বাকি তিন দিন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিযে আসছে, ভোটের উত্তাপ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। একের পর এক হামলা হচ্ছে সারা দেশের সংসদীয় এলাকাগুলোতে। কোথাও কোথাও সংঘাত-সহিংসতা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারে হামলা-সংঘাত যেন কালিমালিপ্ত রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে। হামলা ও সংঘাত থেকে বাদ যাচ্ছেন না প্রার্থীরাও। এসব হামলায় তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

গত দুই সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট ও বিএনপির মিলিয়ে অন্তত ৫০ প্রার্থী সরাসরি হামলায় আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি-নির্বাচনী প্রচারের সময় এমপি প্রার্থীদের ওপর বা তাদের গাড়িবহরে দেড় শতাধিক হামলা হয়েছে।

এসব হামলায় আহতদের মধ্যে অনেকে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। দু’একজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।

আহত প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন ঢাকা-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নোয়াখালী-১ আসনের প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানও হামলা থেকে রেহাই পাননি। আহত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের জনপ্রিয় মুখ বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

এ তো গেল প্রার্থীদের কথা। এসব হামলায় প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়েছেন শয়ে শয়ে। অনেকে এখনও হাসপাতালে ভর্তি। এসব নির্বাচনী সংঘাতে সারা দেশে নিহত হয়েছেন চারজন।

হামলা থেকে রেহাই পাননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম।

হামলার শিকার হয়েছেন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে সিসিইউতে চিকিৎসা নেয়া হয়েছে গাজীপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হককে। তার মতো বিভিন্ন আসনে প্রচারে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন প্রার্থীদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা।

ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ওপর দুবার, তার স্ত্রী ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের ওপর তিনবার হামলা হয়েছে।

নাটোরে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির ওপর দুবার হামলা হয়েছে।

হামলার শিকার হয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানও।

১৬ ডিসেম্বর নরসিংদী-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পলাশ উপজেলার পাঁচদোনা বাজারের এ হামলায় অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় মঈন খান একটি দোকানে আশ্রয় নেন।

দুর্বৃত্তদের হামলায় গত সোমবার শরীয়তপুরে গুরুতর আহত হন শরীয়তপুর-৩ (ভেদরগঞ্জ-ডামুড্যা-গোসাইরহাট) আসনের বিএনপি প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপু।

গতকাল প্রতিপক্ষের হামলায় খুলনায় রকিবুল ইসলাম বকুল আহত হন। একই দিন নোয়াখালী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবদীন ফারুকের ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে উঠান বৈঠক করার সময় পুলিশের লাঠিপেটায় (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া আসন) বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান আহত হন বলে প্রার্থীর অভিযোগ। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আখতারুজ্জামান লিখেছেন- ‘আমার ছেলেকেও মারধর করে গুম করে ফেলতে চেয়েছিল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমার ছেলেকে বলে দেয় ধানাইপানাই না করে আমরা যেন এলাকা ছেড়ে চলে যাই।

মঙ্গলবার শেরপুরে হামলা হয় বিএনপি সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকার ওপর।

রোববার রাতে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি সড়কে হামলায় আহত হন মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহা, তার স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ সাতজন। ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির কর্মী-সমর্থকরা এ হামলা চালায় বলে বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ।

গত শনিবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তিনআনীবাজারে শেরপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেলের ওপর হামলা করা হয়।

ওই রাতে গণসংযোগকালে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনবাজারে বিএনপি প্রার্থী জিকে গউছের ওপর হামলা করা হয়। হবিগঞ্জের জনপ্রিয় এই মেয়রের অভিযোগ পুলিশ তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্র্রার্থী জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা হয়।

ফরিদপুর শহরের চকবাজার চালপট্টিতে গণসংযোগকালে বিএনপি প্রার্থী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের ওপর হামলা করে হেলমেট পরা একদল যুবক।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বান্দেরবাজারে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া, নরসিংদীর শিবপুরের শিমুলিয়া এলাকায় নরসিংদী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মনজুর এলাহীর ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ফেনীর সোনাগাজীতে জনসভা শেষে দাগনভূঞায় ফেরার পথে হামলার শিকার হন বিএনপির এমপি প্রার্থী আকবর হোসেন। একই দিন দুপুরে বরিশাল-২ আসনের প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর গাড়িবহরে হামলা হয়। এতে সান্টুসহ ৩০ জন আহত হন। একই দিন রাজশাহীর বাঘমারায় হামলার শিকার হন বিএনপি প্রার্থী আবু হেনা।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী কর্নেল অলি আহমেদের ছেলে ওমর ফারুকের ওপর হামলা হয়।

সিরাজগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদ তার বাসা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে ইবি রোড মোড়ে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের টিয়ারশেল ও রবার বুলেটে আহত হন রুমানা মাহমুদসহ ২০ জন।

রাজধানীর টিকাটুলীতে গণসংযোগকালে হামলা হয় ঢাকা-৬ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর ওপর।

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের শাহ রিয়াজুল হান্নানের ওপর হামলা হয়। ওই দিন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার পথে হামলা হয় বিএনপি প্রার্থী মঈনুল ইসলাম খানের ওপর।

১৩ ডিসেম্বর যশোর শহরের মুড়লি জোড়া মন্দির এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন যশোর-৩ (সদর) আসনের বিএনপি প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়।

পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গাড়িবহরে হামলা হয়।

এ ছাড়া হামলায় আহত হন বিএনপি প্রার্থী কিশোরগঞ্জে শরীফুল আলম, সিরাজগঞ্জে ডা. মুহিত, বাগেরহাটে এমএ সালাম, চট্টগ্রামে আজীবুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাতক্ষীরায় হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ঝালকাঠিতে জেবা আমিনা খান, নোয়াখালীতে মোহাম্মদ শাজাহান।

ভোটের প্রচারের শুরুর দিকে হামলার শিকার হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার গাড়িবহরের অন্তত চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

রক্তাক্ত গয়েশ্বর রায়

ঢাকা-৩ আসনে বিএনপির গণসংযোগে হামলা হয়েছে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের শুভাঢ্যা বেগুনবাড়ী এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। হামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মাথা ফেটে যায়। তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেগুনবাড়ী এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করছিলেন।

পরিচর্যা ক্লিনিকের সামনে পৌঁছলে শতাধিক লোক লাঠিসোটা হাতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।

অনেকে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। পরে সেখান থেকে তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করছিলেন।

হঠাৎ যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শতাধিক নেতাকর্মী সশস্ত্র অবস্থায় তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সুলতান নাসের, জয়নাল আবেদীন বাবুল, হিরা, আবু কাওসার, ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাজী মাসুম, শ্রমিক দল নেতা আমজাদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. রাশেলসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

পুলিশের গুলিতে আহত মাহবুব উদ্দিন খোকন

নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী) আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সোনাইমুড়ী বাজারে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ২০ নেতাকর্মী আহত হন। পরে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।

খবর পেয়ে ওসি নিজেই ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পিঠে ৫টি, থুতনিতে একটি ও হাতে দুটি রাবার বুলেট ছুড়ে। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পিএসসহ নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে তাদেরও ওসি এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় তিনিসহ ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে বিএনপির এমপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দাবি করেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় সোনাইমুড়ী বাজারে প্রধান সড়কের পাশে আমি আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করেছি। এ সময় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীরা গণসংযোগে বাধা দিয়ে ১০-১২ কর্মীকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে এবং বিএনপি সমর্থিত ৩০-৪০টি দোকান ভাঙচুর করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কর্মীদের বিএনপির কর্মীরা ধাওয়া করলে ওসি আবদুল মজিদ নিজেই আমার মুখের নিচে (থুতনিতে), পিঠে ৫টি, হাতে দুটি, থুতনিতে একটি গুলি, পিএস ইকবাল হোসেন রুবেলের পায়ে গুলিসহ ২০ নেতাকর্মীকে গুলি করেছে।

এ্যানির ওপর হামলা

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির ওপর হামলা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এ্যানি মিছিল নিয়ে প্রচার চালানোর সময় তার ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে তাকে আহত করে। এ সময় সঙ্গে থাকা কর্মী-সমর্থকরা তাকে রক্ষার্থে এগিয়ে আসেন। তারাও হামলাকারীদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। এতে দুপক্ষের প্রায় ২৫ জন আহত হন।

উঠান বৈঠকে হামলা, রক্তাক্ত মেজর আখতার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ হামলায় রক্তাক্ত জখম হয়েছেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।

সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় কটিয়াদী উপজেলার বীর নোয়াকান্দি গ্রামে উঠান বৈঠকে এ হামলা হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আখতারুজ্জামানের ছেলে হাবিবুজ্জামান রনিসহ অন্তত তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আখতারুজ্জামানের অভিযোগ, নির্বাচনী গণসংযোগের অংশ হিসেবে রাতে তিনি উঠান বৈঠক করছিলেন। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর সাদা পোশাকে পুলিশ এসে হামলা চালায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।

কটিয়াদী থানার ওসি শামসুদ্দিনের ভাষ্য-নোয়াকান্দি গ্রামে আওয়ামী-লীগ বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে, এমন খবরে পুলিশ সেখানে গেলে বিএনপির কর্মীরা হামলা চালায়। এতে তিন এসআইসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আ’লীগের হামলায় আইসিইউতে মিলনের স্ত্রী শম্পা হক

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনের কারাবন্দি ধানের শীষের প্রার্থী ফজলুল হক মিলনের স্ত্রী শম্পা হকের ওপর একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। সোমবার নির্বাচনী প্রচারে হামলায় শম্পা হকসহ কমপক্ষে ১০ জন গুরুতর জখম হয়েছে। এদের মধ্যে শম্পা হককে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে এবং বাকিদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

সোমবার দুপুরে কালীগঞ্জ থানার মূল ফটকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এ হামলা করে। এর আগে শুক্রবার পূবাইলের মাঝুখানে শম্পা হকের প্রচারে হামলা করা হয়।

শম্পা হকের এক আত্মীয় সাংবাদিকদের জানান, সোমবার দুপুরের দিকে দুটি গাড়ি নিয়ে কয়েকজন নারী ও পুরুষকর্মী নিয়ে কালীগঞ্জ থানায় ফজলুল হকের একটি বন্দুক জমা দিতে বতুর্লের নিজ বাড়ি থেকে রওনা হয় শম্পা হক।

তিনি বলেন, সকালে যেতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ওসি শম্পা হককে দুপুরের পর যেতে বলে। পরে শম্পা হক দুপুরে কালীগঞ্জ থানার মূল ফটকে গিয়ে পৌঁছলে সেখানে আগ থেকে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করা সরকারদলীয় কর্মীরা গাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়।

হামলাকারীরা শম্পা হকসহ কর্মীদের গাড়ি থেকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। লাঠির আঘাতে শম্পা হকসহ অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে শম্পা হক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।