নয়াপল্টনে যা কথা হলো গয়েশ্বর-বিপুর
হামলাকারীদের ‘অবুঝ’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিচার চাইবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বুধবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু দেখা করতে আসলে গয়েশ্বর চন্দ্র একথা বলেন। আর হামলার ঘটনাকে অনকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে বিপু বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা লজ্জিত, যে দলেরই হোক না কেন খারাপ পরিস্থিতি প্রশয় দেবো না।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এবং নসরুল হামিদ বিপু একই আসনের নৌকার প্রার্থী। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় হামলার শিকার হন গয়েশ্বর। তারপর আজ সকাল ১১টা ১০ মিনিটে গয়েশ্বরের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে আসেন বিপু। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। পরে দুজনই গণমাধ্যমে কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, ‘আমার একটা কনফিডেন্স ছিল কেরাণীগঞ্জের বুকে কখনও কেউ আমাকে অসম্মান করবেন না। কারণ আমি আমার নিজের জীবনের সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে দল-মত নির্বিশেষে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কেরাণীগঞ্জের প্রতিটি মানুষের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক। এই গণতন্ত্রের টানাপোড়েনেও আমরা চেষ্টা করছি ১০টা বছর আমরা পাশে বসা নসরুল হামিদ বিপু, মাননীয় মন্ত্রী আমার ছোট ভাই, কারণ আমরা ১০টি বছর বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের মতো চলছি ১০টি বছর। আমরা একে অন্যের আমন্ত্রণে এক সঙ্গে হয়েছি অনেকবার। কেরাণীগঞ্জে আমরা উভয় উভয়ের ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছি। পুলিশ প্রশাসনের লোক আমার নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে সেটা একটা সাবজেক্ট কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের দুজনের মধ্যে কখনও ঝগড়াঝাটি হয়নি। এই কনফিডেন্সের ওপরই নির্বাচনটা করতেছিলাম। কালকে যে ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনাটা আমার গাড়িতে ওঠার আগে, কিছু অতি উৎসাহী ছেলেপেলে থাকে। কখনও কখনও কোনো মিছিলে গোয়েন্দাদেরও লোক থাকে। তারাও কখনও কখনও কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দিয়ে একটা নেতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। এবং আমি বিশ্বাস করি বিপু স্বীকার করবে যে, এখানে অতি উৎসাহী বা গোয়েন্দাদের কেউ থাকতে পারে নির্বাচনের আগে খারাপ পরিবেশ তৈরির জন্য, এটি হতেও পারে, নাও হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ওদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও আক্রমণের হাত থেকে আমি বাঁচি নাই। যা-ই হোক আপনাদের আশীর্বাদ, মা-বাবার আশীর্বাদ আমি বেঁচে আছি, এটাই বড় কথা। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আমার এই বয়সে এত রক্তপাতের পর আমার হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছানোর কথা না। ছুটির দিন ছিল, যানযট ছিল না, একটানে আসতে পারছিলাম। বেঁচে আছি, দোয়া করবেন। আর আমি এর বিচারও চাই না। যারা করছে তারা অবুঝ, তারা তাদের আবেগ, এই আবেগ রাজনীতির জন্য কতটুকু ক্ষতিকারক….। অসুস্থ অবস্থায় নির্বাচনের মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। আরেক আসছে আমাকে দেখতে আমি ধন্যবাদ জানাই তাকে সহানুভূতিশীল মনোভাবের জন্য। আমি তার পাশে অবশ্যই থাকবো, অতীতেও ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকবো, এখন তার দলের লোক অবুঝ, আবেগ প্রবন সেটা তার দলীয় সিদ্ধান্ত নেবে। কখনও কাউকে মামলা মোকাদ্দমা দেওয়ার মত মনোভাব কখনও ছিলো না, আমিও মন্ত্রী ছিলাম, সে কারণে আমি কারো বিরুদ্ধে মামলাও দিতে চাইবো না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আশা করি এর মীমাংসা হবে এবং আমি আরো আশা করি যে, নির্বাচন হবে, হবে না, ৩০ তারিখ পার হবে, ৩০ তারিখের পরে কেরাণীগঞ্জের মানুষ সবাই, মিলেমিশে একসঙ্গে বাস করবো।’
গয়েশ্বররের বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা বিপুর কাছে জানতে চান হামলার ঘটনায় তিনি দায় এড়াতে পারেন কি না? এর জবাবে বিপু বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে শুনতে পেয়েছেন যে, দাদার পরিবারের সঙ্গে আমাদের খুব নিবিড় সম্পর্ক। আমার বাবার সঙ্গেও উনি চলেছেন। বাবা বহুদিন যাবত কেরাণীগঞ্জে রাজনীতি করছেন। আমার বাবা ওনার শিক্ষকও ছিলেন। সুতরাং আমাদের সঙ্গে ওনাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। রাজনীতির বাইরেও আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। আমরা চাইছি, বিগত বছর যা হইছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ভুলে গিয়ে গত ১০ বছর আমরা শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করছি। আপনারা গণমাধ্যমে দেখে থাকবেন, ১০ বছরে ছিলো অন্যরকম কেরাণীগঞ্জ এবং সেই কালচারটাই আমরা বজায় রাখতে চেয়েছি। আমি নির্বাচন করেছি দাদার সঙ্গে ২০০৮-এ। তখনও আমরা দুজনে একসঙ্গে একই পথে হেঁটে ভোট চেয়েছি এবং এটিই তো আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার আদর্শ। আমরা এটাই বজায় রাখতে চাই। গতকালকে যে অনাকাঙ্ক্ষি ঘটনাটা ঘটে গেছে, আমরা সকলে লজ্জিত, এ বিষয়ে। আমরা চাই না এরকম হানাহানি করে কোনো নির্বাচন হোক। চাই একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হবে। এখনও সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। দাদা আমার বাসায় কালকে যাবেন। উনি দীর্ঘদিন যাবত ওখানে রাজনীতি করছেন। আমাদের থেকে অনেক সিনিয়র এবং তিনি আমাদের গুরুজন।’
বিপু আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যারা দায়ী, তারা অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইতোমধ্যেই কালকে রাতে তিনজনকে ধরেছে। এই সব ছেলে কোথা থেকে আসলো, কারা আসলো, অনেক সময় অতি উৎসাহী যেটা দাদা বললেন, যে অতি উৎসাহী কিছু লোকজন আছে, অথবা ষড়যন্ত্রের মধ্যে যারা জড়িত হয়ে অনেকে আছে যারা অঘটন ঘটাতে চায় রাজনীতির পরিস্থিতি আরো নষ্ট করার জন্য। আমরা দুজন রাজনীতি করবো। আমরা নির্বাচন করবো এখন পর্যন্ত আমরা ভালো আছি। আমাদের পরিস্থিতি ভালো, কেরাণীগঞ্জের পরিস্থিতি এখনও শান্ত। আমরা মনে করি যে, কোনো ধরনের খারাপ পরিস্থিতি মোটেও আমরা প্রশয় দেবো না। আগেও কোনোদিন দেইনি, সে যে দলেরই হোক না কেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলবো তারা যেন ব্যবস্থা নেয়।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন