‘নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮১.৮৭ শতাংশই কোটিপতি’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮১.৮৭ শতাংশের (২৪৪ জন) সম্পদ কোটি টাকার ওপরে। রবিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ীদের তথ্য উপস্থাপন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
সংবদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার জানান, প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা বা ক্ষেত্রমতো থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সংস্যরা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর প্যানেল তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড উক্ত প্যানেল হতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবেন। কিন্তু এ বিধানটি কোনও দলকেই অনুসরণ করতে দেখা যায়নি।
সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ৮০.৮৭ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহোজোটের নির্বাচিতদের মধ্যে ৮১.৯৪ (২৩৬ জন) এবং ঐক্যফ্রন্টের ৫৭.১৪ (চারজন) এবং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিতদের মধ্যে ৩৩.৩৩ শতাংশ (একজন) রয়েছেন।
নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রবেশ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচিতদের ৬১.৭ (১৮২ জন) শতাংশের পেশা ব্যবসা। এরমধ্যে মহাজোট থেকে নির্বাচিতদের ৬০.৪১ এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতদের ৭১.৪২ শতাংশ রয়েছে। আইন পেশায় রয়েছেন ১২.৭৫ শতাংশ। সংসদে ব্যবসায়ীদের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রার্থীদের মামলার চিত্র তুলে ধরে সুজন জানিয়েছে, নির্বাচিত ২৯৮ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে। আগে ছিল ১২২ জনের বিরুদ্ধে। ৩০২ ধারায় মামলা রয়েছে এমন প্রার্থী চারজন। আগে ছিল ৩৩ জনের বিরুদ্ধে। নির্বাচিতদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন ঋণগ্রহীতা রয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পুরো পরিবেশ যদি আমরা বিবেচনায় নেই তাহলে সেই সময়ের পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন তথা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার অনুকূল মনে করার কোনও অবকাশ নেই। প্রচারের পুরো সময়জুড়েই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ, নির্বাচনি প্রচার বাধাদান, হামলা, গ্রেফতারি-হয়রানি ইত্যাদি কারণে অনেক প্রার্থীর নির্বিঘ্নে প্রচার কাজ চলাতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। বাধার কারণে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও সমর্থকরা প্রচারণা চালাতে না পারা, বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকাসহ অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে ১৭ জন নিহত, বেশিরভাগ কেন্দ্রে ঐক্যফ্রন্ট ও তার নেতাকর্মী এবং পোলিং এজেন্টদের অনুপস্থিত দেখা গেছে। আবার বাধা না থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থীকে প্রচারণায় নামতে দেখা না যাওয়ার অভিযোগ আছে। নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনি প্রচারচিত্র দেখে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে অনিয়মেরও অনেক অভিযোগ আমাদের গোচর হয়েছে। কোনও কোনও কেন্দ্রে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া, ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করা, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকলেও ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ না করা, কোনও কোনও কেন্দ্রে অস্বাভাবিক বেশি বা কম ভোট পড়া, ইভিএম ও অন্য আসনগুলোর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা লক্ষণীয় ছিল।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছে এবং মহাবিপর্যয় হয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। এর কারণ অনুসন্ধান করলে দু’টি বিষয় বেরিয়ে আসবে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নির্বাচনি অনিয়ম। অনিয়মের অভিযোগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কোনও নিবাচন পর্যবেক্ষণ করি না। তবে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর কাজ করি। নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, কমিশনের দায়িত্ব হবে সেগুলো তদন্ত করা। অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করারও ক্ষমতা আছে কমিশনের।’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি যেই কেন্দ্রের ভোটার সেই কেন্দ্রে দেখেছি নৌকা ও হাতপাখার পোস্টার ছাড়া অন্য কোনও প্রার্থীর পোস্টার নেই। নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকলে এটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান প্রমুখ।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন