বিমান ছিনতাই চেষ্টা : যেভাবে শুরু যেভাবে শেষ

চট্টগ্রামে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বিজি-১৪৭ ছিনতাই চেষ্টার প্রায় তিন ঘণ্টার মধ্যে কমান্ডোদের অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। কমান্ডোদের অভিযানে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী আহত অবস্থায় আটকের পর মারা গেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় বিমানবন্দর খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান।

ওই ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

ঘটনার শুরু যেভাবে
রোববার বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ মডেলের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি ১৪২ জন যাত্রী ও পাঁচজন ক্রু নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাচ্ছিল। হঠাৎ বুকে বোমা বাঁধা আছে দাবি করে এক অস্ত্রধারী প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দাবি করে বসে। ওই অস্ত্রধারী একজন কেবিন ক্রুকে জিম্মি করে। পরে প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যাপী র‌্যাব, পুলিশ, নৌ ও সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডো অভিযানে এ অবস্থার অবসান হয়।

পাইলট ও ক্রুদের সাহসিকতা
পাইলট ও ক্রুদের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় যে কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ এবং সম্ভব হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, তারা খুবই বুদ্ধি করে সময় ক্ষেপণ করেছেন। ফলে আমাদের পক্ষে অপারেশন চালানো সহজ হয়েছে। উড়োজাহাজ ছিনতাই বা সন্ত্রাসী হামলায় এই ধরণের কৌশল খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং সেটাই করেছেন এই বিমানের পাইলট এবং ক্রুরা।

অস্ত্রধারী মাহাদী তার কাছে বোমা আছে দাবি করে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার সময় কেবিন ক্রুরা কৌশলে তাকে পাইলটের কাছে নিয়ে যান। এই সুযোগে যাত্রীদের জরুরি গেইট দিয়ে নামিয়ে আনা হয়। বড় ধরণের কোন ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই তাদের নিরাপদ স্থানে নেয়া সম্ভব হয়।

পরে পাইলট ও অন্য ক্রুরা বের হতে পারলেও সাগর নামে একজন ক্রু জিম্মি অবস্থায় ভেতরে থেকে যায়। কিছুক্ষণ পর সাগর নামের ক্রুকেও অক্ষত অবস্থায় বের করে আনা সম্ভব হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রী জানান, অস্ত্র হাতে এক দুর্বৃত্ত ককপিটে ঢুকতে চাইলে পাইলটরা তাতে বাধা দেন। এ সময় একটি গুলির আওয়াজও তারা শুনতে পান।

৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযান
উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার পর শাহ আমানত বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজটি ঘিরে ফেলে আই শৃঙ্খলা বাহিনী। উড়োজাহাজের সকল যাত্রী এবং কেবিন ক্রুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়। দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত পৌনে ৮টার দিকে যৌথ অভিযানে শুরু করে কমান্ডোদল। মাত্র ৮ মিনিটের অভিযানে ছিনতাইকারীকে পরাভূত করতে সক্ষম হয় যৌথ কমোন্ডো বাহিনী। প্রথমে ওই ছিনতাইকারীকে আহত অবস্থায় আটক করলেও পরে সে মারা গেছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান।

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব-৭ এবং নৌবাহিনীর কমান্ডো দলও অভিযানে অংশগ্রহণ করে।

কমান্ডো অভিযানের পরবর্তী পরিস্থিতি
উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার পর শাহ আমানত বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে বিমান বন্দরটিতে সকল ধরণের ফ্লাইট উঠা নামা বন্ধ করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তপক্ষ। সেনা কমান্ডোদের অভিযানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ছিনতাইকারী নিহত এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর শাহ আমানত বিমানবন্দর খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান।

এখন উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ছিনতাই চেষ্টাকারীর পরিচয়
এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রথমে পাইলট ওই ছিনতাইকারীকে বিদেশি বলে মনে করলেও সে আসলে বিদেশি নয়, বাংলাদেশি। তার নাম প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি মাহাদী। তবে এর বেশি কিছু আমাদের জানার সুযোগ হয়নি। সে তার বউয়ের সাথে কথা বলতে চেয়েছিল, তবে তার কোন নাম্বার দিতে পারেনি। এর বেশি কিছু এই মুহূর্তে জানা সম্ভব নয়। তার ব্যাগ, কাগজ পত্র খুঁজে তার পরিচয় সম্পর্কে পরে জানানো হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

জিম্মিকারী কেন এরকম করল?
ওই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পাইলটের বরাত দিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অস্ত্রধারী মাহাদী শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল। তবে তাকে দেখে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে মনে হয়েছিল। তার কাছে একটি পিস্তল ছিল। সে কীভাবে অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে পারলো সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব কিছু তদন্ত সাপেক্ষ পরে জানানো হবে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কী ধরণের তদন্ত
ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান নাইম হাসান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত করবো। তদন্তের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারবো আসলে কিভাবে এই ধরণের ঘটনা ঘটলো। আমাদের সকল জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। সুতরাং ফুটেজগুলো দেখলে আমরা বুঝতে পারবো কিভাবে কী হয়েছে। তবে অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। ওই ঘটনার পর বিমান বন্দরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়ছে। তদন্তের পর ওই ব্যক্তিসহ ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এ ঘটনার পরে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।