ভারতের অভিযানে মারা গেছে শুধু একটি কাক, দাবি স্থানীয়দের
ভারতের বিমান হামলায় পাকিস্তানের বালাকোটের একমাত্র আহত বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী নুরাহ শাহ। মঙ্গলবার ভোরে কেন তিনি কেঁপে উঠেছিলেন এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। তবে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তার মাটির তৈরি বাড়ি কেঁপে উঠে এবং ডান চোখের ওপরের দিকে সামান্য একটু কেটে যায়।
ভারত বলছে, তারা কিছু সন্ত্রাসীকে আঘাত করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে আপনি কোনো সন্ত্রাসী দেখতে পাচ্ছেন কি- প্রশ্ন নুরাহ শাহর। পাকিস্তানের খাইবার পাভতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জাবা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। নুরাহ শাহ বলেন, আমরা এখানে বসবাস করছি। আমরা কী সন্ত্রাসী?
নয়াদিল্লি বলছে, পুলওয়ামায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারির আত্মহামলার দায় স্বীকারকারী জঙ্গিগোষ্ঠী জয়েশে-ই-মোহাম্মদের বড় একটি প্রশিক্ষণ শিবির অভিযানে ধ্বংস হয়েছে। ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে ওই হামলায় অন্তত ৪০ জওয়ানের প্রাণহানি ঘটে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে বলেছেন, অভিযানের জয়েশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি প্রশিক্ষক, জ্যেষ্ঠ কমান্ডার-সহ অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। এতে আত্মঘাতী মিশন পরিচালনাকারী গোষ্ঠীকেও ধ্বংস করা হয়েছে। ভারতের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, বালাকোটে অভিযানে প্রায় ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার ভারতের জ্যেষ্ঠ এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বালাকোট অভিযানে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আগের দেয়া তথ্যকে নাকচ করে দিয়েছেন। দেশটির বিমানবাহিনীর প্রধান আর. জি. কে কাপুর হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আগাম তথ্য দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন। তবে বিমান হামলায় জয়েশের ঘাঁটিতে ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বালাকোটে হতাহতের ব্যাপারে ভারতের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। তারা বলছে, ভারতের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। একটি পার্বত্য অঞ্চলে ভারতীয় বিমান বোমা ফেলেছে। এতে কেউ আহত কিংবা নিহত হয়নি।
তবে নয়াদিল্লির এই দাবি আগামী নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে চাওয়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য কোনো ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে কি-না তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ইতোমধ্যে দেশটির বিরোধী দলগুলো ওই অভিযানের ফলাফলে তথ্য প্রকাশ করতে ক্ষমতাসীন সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাহাড়বেষ্টিত জাবা গ্রামের বাসিন্দারা ওইদিন সকালে মাটিতে চারটি বিশাল গর্ত ও কিছু স্পিলিন্টার গাছে বিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়েছেন। স্থানীয় সময় ভোর তিনটার দিকে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শুনলেও এছাড়া আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির আলামত তারা পাননি।
জাবা গ্রামে পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রশীদ বলেন, বিস্ফোরণে সবকিছু কেঁপে উঠেছিল। তবে এতে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। কেউ মারা যায়নি। তবে বেশ কিছু পাইন গাছ ধ্বংস হয়েছে; সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। তবে একটি কাক মারা গেছে।
পাহাড়বেষ্টিত জাবা গ্রাম বনাঞ্চলের জন্য পাকিস্তানি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। অ্যাবোটাবাদ থেকে এই স্থানের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। ২০১১ সালে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে ওসামা বিন লাদেন অ্যাবোটাবাদে নিহত হন।
এই গ্রামে ৪০০ থেকে ৫০০ জন বসবাস করেন। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে তৈরি মাটির ঘরে বসবাস তাদের। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জাবা গ্রামের অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছে, তারা কেউ নুরাহ শাহ আহত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো তথ্য জানেন না বলে জানিয়েছেন।
অন্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আব্দুর রশীদ বলেন, আমি কোনো মরদেহ দেখতে পাইনি। জানালার ভাঙা টুকরো অথবা অন্যকিছুর আঘাতে একজন স্থানীয় বাসিন্দা আহত হয়েছেন। জাবার বেসিক হেলথ ইউনিট হাসপাতালের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সিদ্দিক মঙ্গলবার রাতে ডিউটি করেন। তিনিও হতাহতের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
সিদ্দিক বলেন, এটা একটা মিথ্যাচার মাত্র। এটা নোংরামি। আমরা একজন আহত ব্যক্তিকেও পাইনি। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি সামান্য আঘাত পেয়েছিলেন। তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। যদিও তাকে এখানে আনা হয়নি।
সূত্র : রয়টার্স।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন