ডাকসু কেন ‘ছাত্র’ সংসদ, ‘শিক্ষার্থী’ বা ‘ছাত্রছাত্রী’ সংসদ নয় কেন?
১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন৷ এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাস উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ডাকসু কেন ‘ছাত্র’ সংসদ, এটা কেন ‘শিক্ষার্থী’ বা ‘ছাত্রছাত্রী’ সংসদ নয়? খবর ডয়চে ভেলে’র।
ইংরেজিতে ডাকসু-র পুরো নাম ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’৷ যার বাংলা করা হয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’৷ একইভাবে টিএসসি-র (টিচার-স্টুডেন্ট সেন্টার) বাংলা করা হয়েছে ‘ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র’৷ কেন এটার নাম ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেন্দ্র’ কিংবা ‘ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক কেন্দ্র’ নয়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘৭০ বছর আগে যখন এটা এসেছে, তখন কিন্তু জেন্ডার ইস্যুটা এত বেশি ছিল না৷ তখন দেখেন রবীন্দ্রনাথও লিখেছেন ছেলেদের মহাভারত? বিষয়টা আসলে, ৭০ বছর পরে এসে নারী-পুরুষ ইস্যুটা সামনে এসেছে৷ ফলে এটা বাংলায় শিক্ষার্থী সংসদ হতেই পারে৷ আসলে ইংরেজিতে কোনো সমস্যা নেই৷ কারণ ডাকসু মানে হচ্ছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’৷ কিন্তু আমরা বাংলায় যখন লিখছি, তখন ছাত্র লিখছি৷ এটা হয়ত আমরা পরিবর্তন করতে পারি৷ হ্যাঁ, নির্বাচনের আগেই ডয়চে ভেলে এই দাবিটা তুলতেই পারে? আমরাও সমর্থন করি৷ নতুন নেতৃত্বে যাঁরা আসবেন তাঁরা হয়ত ছাত্র বাদ দিয়ে শিক্ষার্থী সংসদ লেখার কাজটা করবেন৷’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও বলছেন, এটা ছাত্র সংসদ না রেখে ‘শিক্ষার্থী’ কিংবা ‘ছাত্রছাত্রী’ সংসদ হওয়া উচিত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ইনতিশার স্বাক্ষর বলেন, ‘‘ইংরেজিতে তো ঠিকই ছিল৷ কিন্তু অনুবাদে গিয়ে বিষয়টা অন্য রকম হয়ে গেছে৷’’ কেন ইংরেজি ঠিক থাকলেও বাংলায় এমন হলো? জবাবে স্বাক্ষর বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট যাঁরা এটার অনুবাদ করেছেন তাঁরা তখন রক্ষণশীল ছিলেন বা বিষয়টা ওভাবে দেখেননি৷ তাই ছাত্র সংসদ হয়ে গেছে৷ তখন হয়ত কেউ প্রতিবাদও করেনি৷ ফলে সেই যে ছাত্র দিয়ে শুরু, এখনও সেভাবেই চলছে৷ ডাকসু যেভাবে ছাত্র সংসদ হয়েছে, একইভাবে টিএসসিও হয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র৷ এখন সময় এসেছে, পরিস্থিতিও বদলে গেছে, ফলে অবশ্যই ডাকসু শিক্ষার্থী সংসদ ও টিএসসি শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেন্দ্র হতে পারে৷’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির এবারের নির্বাচনে জিএস পদে লড়ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হ্যাঁ, ছাত্র সংসদ বাদ দিয়ে শিক্ষার্থী সংসদ হতে পারে৷ আসলে ছাত্র বোঝাতে ছেলে-মেয়ে উভয়কেই বোঝানো হয়েছে৷ এখন এই দাবিটা উঠলে পরিবর্তনটা হতে পারে৷’’
ডাকসুতে স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের ব্যানারে জিএস পদে নির্বাচন করছেন আসিফুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘এভাবে আসলে কখনও ভেবে দেখা হয়নি৷ আসলেইতো এটা কেন ছাত্র সংসদ? এটা তো শিক্ষার্থী সংসদই হওয়ার কথা৷ আমাদের পরিষদ থেকে এখনও ইশতাহার ঘোষণা করা হয়নি৷ আমরা শিগগিরই ইশতাহার ঘোষণা দেব৷ সেখানে আমরা এই বিষয়টা আমাদের ইশতাহারে অবশ্যই উল্লেখ করব৷’’
ডাকসুর সাবেক ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘আমি যখন নির্বাচন করেছি, তখন কিন্তু বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদ বলতাম৷ কিন্তু এটা লম্বা হয়ে যায় বলে কখনও কখনও ছাত্র সংসদও বলেছি৷ তবে এটা যে শিক্ষার্থী সংসদ হতে পারে, সেভাবে কখনও ভাবিনি৷ এখন যদি এই দাবিটা উঠে আমার মনে হয় সেটা করা যেতে পারে৷ তাতে তো ডাকসুর কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না৷ ইংরেজিতে তো কোনো সমস্যা নেই, সমস্যাটা বাংলায়৷ ফলে আমরা যদি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ না বলে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বলি এটা ভুল হবে না৷ আগামী নির্বাচনের পর এটা নিয়ে কাজ শুরু হতে পারে৷ যদিও নির্বাচনে যা হচ্ছে তা নিয়ে আর কি বলব?’’
কী বলছে কর্তৃপক্ষ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘‘এটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে, তাই ছাত্র সংসদ বা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র৷ তখন তো ছাত্র বলতে ছাত্র-ছাত্রী সবাইকেই বোঝাত৷ যেমন ধরেন উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর মহাভারত, সেটা তো ছেলেদের মহাভারত৷ আবার রমায়ন, ছেলেদের রামায়ন৷ আসলে সংখ্যায় পুরুষরা বেশি ছিল৷ পুরুষের প্রাধান্য বেশি ছিল তাই এভাবে চলে আসছে৷ তখন তো ছাত্রী বেশি ছিল না৷ আসলে শিক্ষার্থী সংসদ ভালো শোনায় না, এটা ছাত্রছাত্রী সংসদ হতে পারে৷ এই ধরনের দাবি যদি উঠে তাহলে নির্বাচনের পর আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখতে পারি৷ যেটা ভালো হয়, সবাই মেনে নেয়, সেটা তো করাই যায়৷ এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷’’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন