সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই যৌন হয়রানি! ফেসবুকজুড়ে নিন্দার ঝড়
বান্দরবানের আলীকদমের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার বিরুদ্ধেই যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় শনিবার (২৩ মার্চ) সকালে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক মুরং তরুণী চেয়ারম্যানকে ফুলের মালা দিতে গেলে যৌন হয়রানির স্বীকার হন বলে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে স্পষ্ট।
এই ঘটনার প্রসঙ্গে পাহাড়ি অ্যাকটিভিস্ট চলাপ্রু মারমা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিনন্দন, বান্দরবান আলীকদমের নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। কি সুন্দরভাবে সংর্বধনা নিচ্ছেন তিনি। আসুন সবাই শুভেচ্ছা জানাই। পাহাড় এক দীর্ঘশ্বাসের নাম..’
জুম্মা উজ্জ্বল চাকমা লিখেছেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধি এইভাবে একজন নারীতে জড়িয়ে ধরতে পারেন না…… এটা সম্পূর্ণ শ্লীলতাহানি ও নারী সমাজকে অবমূল্যায়ন করা।’
শুভ্রা কর লিখেছেন, ‘….সংবর্ধনা নিতে গিয়ে একজন ম্রো তরুণীকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে ছবি তোলার অধিকার উনি কোত্থেকে পান জানেন? পান বাঙালি জাতি হিসেবে তিনি সংখ্যালঘু অন্য জাতিদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এই অহংকার থেকে। অথচ আমরা নিজেদের বলি সভ্য জাতি আর আদিবাসীদের বলি অসভ্য!’
সাদিয়া নাসরিন নামের বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মকর্তা তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘এই ছবিতে যে জানোয়ারটাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম আবুল কালাম। বান্দরবান আলীকদম উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সে…. ফুলের মালা দিতে যাওয়া এই সাধারণ মেয়েটার ওপর উঠে গেছে। মেয়েটার এক্সপ্রেশনই বলে দিচ্ছে কী পরিমাণ অপমানজনক আর যন্ত্রণাদায়ক ছিলো সেই মুহূর্ত্বটুকু তার জন্যে…’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ পারলে কেউ কি আমাকে বলবেন, কোন ক্ষমতা বলে একজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে একজন নারীকে এভাবে যৌন নিপীড়ন করতে পারেন? কোনও ধরনের আইনের আওতায় কি তার এই বদমাইশির শাস্তি হবে?’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এই ঘটনার প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলীকদমের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ছবিগুলো আমাকে বারবার বলে দেয় আমি এদেশের নাগরিক নই …আমি কেবলই একজন দাস।’
এ বিষয়ে রশিদ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শনিবার সকালে দুর্গম কুরুক পাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে এক মুরুং তরুণীর সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। পরে তিনি ওই তরুণীর বাড়িতে দুপুরের খাবারও খান।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আলিকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, ‘কুরুক পাতা ইউনিয়নের মেরিন চর এলাকায় আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। যে মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলেছি, তার পরিবারের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার পারিবারিক সম্পর্ক। মেয়েটিকে আমি ছোটবোনের মতো দেখি। এখানে জোর করে ছবি তোলা হয়নি। আজও বোনের মতোই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে ছবি তুলেছি।’
ছবি তোলার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই ছবি তোলার সময় পাশেই তার মা, বাবা ও বড় ভাই ছাড়াও পাড়ার শত শত লোকজন ছিল। আমি যে ছবি তুলেছি তা নিয়ে তার পরিবারের বা পাড়ার কারও কোনও ধরনের আপত্তি ছিল না। তাছাড়া আমি এই উপজেলায় দীর্ঘ কয়েক বছর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলাম, এখনও আছি। এই উপজেলার সব মানুষ আমাকে চেনে। আমার এ বোনটি নির্বাচনের সময় আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে, কেঁদেছেও। আর আমি তাকে এভাবে শত শত মানুষের সামনে সান্ত্বনা দিয়েছি। আমাদের ভাই-বোনকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে আমি তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবো।’
এ বিষয়ে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকউল্লাহ বলেন, ‘আমি ছবি দেখেছি। তবে এখনও পর্যন্ত কারও কোনও আপত্তি বা অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। মেয়েটি কোথায় থাকে আমি এখনও সে খোঁজও পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করা হলেও মেয়ের বা মেয়ের পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন