জিয়া বাকশালের ফরম ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেন : মেজর হাফিজ

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বাকশালের ফরম পূরণ করেছিলেন বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়াউর রহমানের তৎকালীন একান্ত সচিব মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, হানিফের বক্তব্য সঠিক নয়।জিয়াউর রহমানের কাছে বাকশালের ফরম এলে তিনি তা ওয়েস্ট পেপাপ বাস্কেটে (ময়লার ঝুড়ি) ফেলে দেন।

সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

হাফিজ বলেন, বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) যখন গঠন করা হয় তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরে আমি তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব ছিলাম। একদিন সকালে ১০টায় জেনারেল জিয়া আমাকে বললেন, দেখো তো হাফিজ, আমার কাছে একটা ফরম পাঠিয়েছে। আমি দেখলাম, এটা বাকশালে যোগদানের ফরম। উনি বললেন, তোমরা কি মত? আমি বললাম, স্যার এই ব্যবস্থা টিকবে না, আপনি এটাতে যোগ দেবেন না। উনি আমার দিকে তাকালেন। এরপর উনি বললেন, তুমি ঠিকই বলেছো, ফরমটা নিয়ে উনি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে মধ্যে ফেলে দিলেন।

হানিফকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, ‘আমি এই ঘটনার জীবন্ত সাক্ষী। আমি বলছি, যদি জিয়াউর রহমান বাকশালে যোগ দিয়ে থাকেন, প্রমাণ দেখান। ফরম ফিলাআপ করে থাকলে, দেখান। উই আর সি। মিথ্যাচার করে দেশটাকে আপনারা (আওয়ামী লীগ) শেষ করে দিয়েছেন।

৩০ ডিসেম্বরের ভোটের সমালোচনা করে বিএনপির এই অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দেশের নির্বাচন হয় নাই। বাংলাদেশ একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের করদ রাজ্যে পরিণত হয়েছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, মহানগর বিএনপি নেতা কাজী আবুল বাশার, আহসানুল্লাহ হাসান, সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুবদলের মামুন হাসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ এতে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুল আউয়াল খান, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সেলিম রেজা হাবিব, নবী উল্লাহ নবী, মো. মোহন, মোরতাজুল করীম বাদরু, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের যে চেতনা, যে আদর্শ সামনে নিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ আজ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতা মানে শুধু একটি পতাকা নয়, ভূখণ্ডও নয়। স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে, এই ভূখণ্ডে যারা বাস করে তাদের স্বাধীনতা। তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মুক্তির স্বাধীনতা। যা পুরোপুরি ধবংস করে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ধ্বংস করেছিল এই আওয়ামী লীগ। আজ ৪৮ বছর পর ঠিক একইভাবে তারা নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ছদ্মবেশে একটা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। আজ সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন হয়েছে, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আজ এই দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তিনি শুধু আমাদের দলের নেতা নন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের নেতা। যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। যিনি সারা জীবন এই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই নেতা এখন পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে। প্রতিদিন তার শরীর খারাপ হচ্ছে। তাকে মুক্ত করলেই গণতন্ত্রকে মুক্ত করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় তারা স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয় নিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করে মানুষকে অন্য পথে পরিচালিত করতে চাচ্ছে। ইতিহাস বিকৃত করে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্ত করা সম্ভব নয়।