র‍্যাঙ্কিংয়ে দুর্বল বাংলাদেশী পাসপোর্ট, কারণ কী?

ঘটনা ১ : বাবার চাকুরিস্থল কুয়েত হওয়ায় কারণে বাংলাদেশী নাগরিক ইকরাম ইলিয়াসের শৈশবটা কেটেছে কুয়েতেই।

বাংলাদেশে এসে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পর বর্তমানে মি. ইলিয়াসও কুয়েতেই চাকুরি করছেন। তাকে অনেকটা নিয়মিত বিরতিতেই কুয়েত থেকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে যাতায়াত করতে হয়।

কিন্তু প্রতিবারই বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন – অভিযোগ মি. ইলিয়াসের।

“কুয়েতের বিমানবন্দরে সবসময়ই বাংলাদেশীদের অতিরিক্ত চেকিং করা হয়। কখনো কখনো চেকিংয়ের সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিরও তৈরি হয়।”

এছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের তুলনায় বিমানবন্দরের কর্মীরা বাংলাদেশীদের সাথে কিছুটা “রুক্ষ” ব্যবহারও করে থাকেন বলে মি. ইলিয়াস অভিযোগ করেন।

তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার কারণেই বিমানবন্দরে এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তাকে।

ঘটনা ২ : ছোটবেলা থেকে পরিবারের সাথে নানা দেশে ঘুরে বেড়ানো ঢাকার বাসিন্দা শারমিন মমতাজ বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া রয়েছেন।

মিজ. মমতাজ বলেন, “ইউরোপ বা আমেরিকায় কখনোই বাংলাদেশী বলে কোনো ধরণের বৈষম্যের শিকার হতে হয়নি।”

“আমেরিকায় একবার-দুইবার হয়তো কিছুটা হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে, কিন্তু আমার ধারণা সেটা নাগরিকত্ব নয়, গায়ের রংয়ের জন্য।”

তবে দু’টি আলাদা ঘটনায় – দুবাইয়ে এবং মালয়েশিয়ায় – বিমানবন্দরে “বৈষম্যমূলক” আচরণের শিকার হয়েছিলেন দাবি করেন মিজ. মমতাজ।

বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকায় তার সাথে এমন আচরণ করা হয়েছিল বলে তিনি ধারণা পোষণ করেন।

মি. ইলিয়াসের মত অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকার কারণেই বিমানবন্দরে প্রায়ই বিব্রত হতে হয় তাকে। আবার মিজ মমতাজের মত অনেকে মনে করেন সবসময় যে বাংলাদেশী পাসপোর্টের জন্যই বিমানবন্দরে হেনস্থা হতে হয়, তাও নয়।

পাসপোর্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের ‘দুর্বল’ অবস্থানে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পাসপোর্ট পার্টনার্সের করা ২০১৯ সালের বৈশ্বিক পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিংয়ের সবশেষ তালিকায় অপরিবর্তিত রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান।

সূচকে ১০৪টি দেশের অবস্থানের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৭তম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের সাথে একই অবস্থানে রয়েছে ইরান ও দক্ষিণ সুদান।

কতটি দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করা যাবে – তার ভিত্তিতে হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের সূচকে পরিমাপ করা হয় পাসপোর্টের গুরুত্ব।

সূচকে যৌথভাবে শীর্ষস্থানে রয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া আর সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট।

পাসপোর্টের এই র‍্যাঙ্কিং দিয়ে কী বোঝানো হয়?

বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, পাসপোর্টের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নাগরিকত্বের মূল্যায়ণই করা হয়।

“পাসপোর্টের এই র‍্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে জানা যায় – আপনার দেশ সম্পর্কে বা আপনার পাসপোর্ট সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নটা কী।”

মি. কবির জানান, পাসপোর্টের এই র‍্যাঙ্কিংটা দেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও দেশের মানুষের অবস্থাসহ অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে তৈরি করা হয়।

তিনি বলেন, “র‍্যাঙ্কিংটা ওরা করে পার্সেপশনের (ধারণার) ভিত্তিতে। কোন দেশের পাসপোর্টের দাম বেশি বা কম, সে বিষয়ে কিছু স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয় তারা।”

“কোন দেশের পাসপোর্টের মূল্য কত, তা নির্ভর করে ঐ পাসপোর্টের কী গুণাগুণ রয়েছে তার ওপর,” বলেন মি. কবির।

“যেমন মনে করেন ব্রিটিশ বা আমেরিকান পাসপোর্ট জাল করা খুব কঠিন, সে তুলনায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট জাল করা বেশ সহজ।”

“যেই দেশগুলোর পাসপোর্টের মূল্য বেশি, মনে করা হয় যে ঐ দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো শক্তিশালী, তাদের অর্থনীতি ভালো, তাদের গভর্নেন্স (শাসনপদ্ধতি) ভালো এবং বিশ্বের কাছে ঐ দেশগুলোর একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে।”

পাসপোর্টের র‍্যাঙ্কিং উপরের দিকে থাকার প্রধান সুবিধা সম্পর্কে মি. কবির বলেন, “আপনি একটু ভালো ব্যবহার পাবেন। কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলে হয়তো কিছুটা নমনীয়ভাবে দেখা হয়।”

আর র‍্যাঙ্কিংয়ে নিচের দিকে থাকলে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্টধারী সম্পর্কে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খোঁজখবর নেয়া থেকে শুরু করে ভিসার আবেদন নাকচও করতে পারে কোনো দূতাবাস, বলেন মি. কবির।