দ্বন্দ্ব-সংঘাত || এইচ. এম নুর আলম

দ্বন্দ্ব-সংঘাত
এইচ. এম নুর আলম


আজ এ বসুধায়—-
শান্তি নামের ‘সুখপাখি’-টাই মরিয়া গিয়াছে হায়!-
যত অশান্তির বীজ ভান্ডার ছড়িয়াছে প্রাণে-প্রাণে,
কাঁদিয়া ফিরেছে অসহায় চোখে নিদারুন অশ্রুবানে।

জাতিতে-জাতিতে বেঁধেছে সংঘাত ঝরিছে অসীম খুন-
বাড়িছে দ্বন্দ্ব-ভাগ্য মন্দ তাই আজ রাত কাটে নির্ঘুম।
শাসকে-শাসকে, শোষিত-বঞ্চিত বাঁধিয়াছে ক্ষোভ-দানা
আলেমে-আলেমে, দুশমন-মন, না শুনিছে কেহ মানা।

ভাইয়ে-বোনে চির শান্তির বুক, এক আত্মারই বন্ধন-
সেই বাঁধন ভাঙিয়া কাচ সম ফাটে, উঠে জাগি ক্রন্দন।
পুরুষে-পুরুষে,নারী-পুরুষে যেন ক্ষ্যাপা হায়েনার দল
খেলিছে খেলা এ বিশ্ব ধরাতে ভাই আছে যার বাহুবল-।

স্বামী-স্ত্রীর সুখী সংসারে লেগেছে পাপ কালিমার ছাপ-
জন্মিছে শুধুই কারনে-কারনে অবিশ্বাস আর পাপ।
ঐ দেখো দূরে হাসিছে ইবলিস হাসিছে মিথ্যা-ভাতি-
দ্ব›দ্ব-সংঘাতে মিথ্যা-ছায়াতে কাঁদিছে সত্য- গীতি।

পিতা-পুত্রতে, মাতা-সন্তানে এক পরিবার, এক দেহ
কিন্তু আজিকে কীসের টানে দেখিতে পারে না কেহ?
মায়ার পৃথিবী, ছলনায় ভরা, পাপের কালিমাধার-
কখনো ভালো, কখনো মন্দ,ফের আলো-অন্ধকার।

সারাদিন ঘোরে বন্ধুর সাথে খুন হয় ঘাটে রাতে-
কোলের শিশুটি ধর্ষিত হয় বাবা সম পরিচিতে-।

সুখ-দুখে কাটে সারাটি জীবন এক গাঁয়ে প্রতিবেশি-
সেই প্রতিবেশি হয় যে শত্রু, -হয় জল্লাদ, একপেশি।
ভাই হয় কাঁটা, বোন হয় ঝাটা একখানি জমি-তরে
হিংস্র হয়ে সেই ভাই-বোন চির শত্রু হয়েই মরে।

জাতিতে-জাতিতে ঐক্য ভাতিতে মুসলিম ভাই ভাই
শিয়া-সুন্নী-কুর্দি-আহমদি, এত ভেদাভেদ কেনো পাই?
ভাইয়ে-ভাইয়ে যবে করি ভেদাভেদ অন্য এখানে আসি-
সুযোগ বুঝিয়া দ্বন্দ্ব ঘটায়ে সংঘাত আনে ডাকি-।
সব মানুষ এক খোদার সৃষ্টি তবে কেন বিভক্তি-ভেদ?
তেয়াত্বর ফেরকা, ছত্রিশ জাতি আরো কত ক্লেদ- ছেদ।
দিনে দিনে আরো বাড়িতেছে ঘৃণা দেশ-মহাদেশ-ব্যাপী,
এক জাতি বলে আমরা সত্য আর জনে নাহি হ্যাপী-।

এক দেশ, এক জাত, এক রক্ত তবু ঝরে প্রতি খুন-
স্বদেশের প্রতি এরুপ বিরাগ, মুখে পড়ে কালি-চুন।
একজনে করে আধখানা, আরজনে দুই বিঘা ভূমি-
দখল করিছে হিংসার বানে জ্বলন্ত হুতাশুন জমি।

আজ কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, জিনজিয়াং আর আরাকানে-
হত্যা করিছে নিরীহ মানুষ, ইবলিস হাসিছে হেনে-।
ধর্মে-ধর্মে লাগেনি দ্বন্দ্ব, লেগেছে অধর্মে সংঘাত-বান-
করিছে মানুষ মধু রেখে পাশে,অধর্মের কাল-কূট পান।

কোনো নবী কয়নিকো এথা, ও জাতিকে তুমি মারো-
সকল নবী বলিয়াছিলেন, ‘এক খোদা আরাধনা করো।’
বলেনিকো মুসা,ঈসা- যীশু, বুদ্ধ-নানক, নবী মুহাম্মদ-
‘মানুষ হইয়া মানুষকেই মারো, এটাই শ্রেষ্ঠ কাজ মহৎ ।’

তবু জাত পাতে, মানুষে মানুষে বাড়িছে সংঘাত-মন্দন
ধরাধামে দিন দিন ঝরিছে খুন আর নিতি ক্রন্দন।
বাড়িছে লাঠালাঠি, বোমাবাজি, ফাটাফাটি, পাপ-তাপ-
কে জানে কবে ঘুচিবে সংঘাত, দূর হবে অভিশাপ।

যে পাপ শুরু হয়েছে আদিতে কাবিলের হত্যাবানে–
হাত রাঙিছে লাল রুধিতে ভাই হাবিলের তাজা খুনে,
সেই থেকে আজো ঝরিছে রক্ত,বহিছে ধরা অভিশাপ,
শয়তান তার চির শত্রু হইয়া আসিয়াছে ধরা মাঝ।

সতর্ক থেকো, হে দুর্বলা, হে পাপে ঘোর, আদম সন্তান-
পিছনে তোমার রশি টেনে ধরিছে, অভিশপ্ত শয়তান।
তবু মোরা একই মানুষ, একই রক্ত, এক স্রষ্টার মহাদান-
হাতে হাত রাখি,কাঁধে কাঁধ মোরা, এক আদমের সন্তান।