আলজেরিয়ার পর আরব বসন্তের ঢেউ লাগবে সুদানে?
অর্থনৈতিক মন্দা আর উচ্চ খাদ্য মূল্য সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধ ক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছে। ইসলামপন্থীদের সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে সুদানের ক্ষমতায় আসার পর এবারই তিনি সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখোমুখি হলেন।
মিস্টার বশিরের সমালোচকদের অবশ্য এবার উৎসাহিত করেছে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফলিকার পদত্যাগ।
ব্যাপক বিক্ষোভের জের ধরে সামরিক বাহিনীর চাপের মুখে উত্তর আফ্রিকায় সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের অবসান ঘটেছে তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে।
সুদানে বিক্ষোভকারীদের একজন মুখপাত্র সারাহ আবদেল জালীল বলছেন, বুতেফলিকার বিদায় আফ্রিকায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সফলতার একটি লক্ষণ।
কিন্তু এটি কি সুদানেও আরব বসন্তের ঢেউ বইয়ে দেবে?
একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি
অনেক বছর ধরেই সুদানের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। একটি গৃহযুদ্ধের জের ধরে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যায় ২০১১ সালে। ফলে দুই-তৃতীয়াংশ তেল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয় খার্তুম।
দেশটির সরকার ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করলেও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বলছে এটি দুই-শতাংশের বেশি হবেনা।
দেশটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বরে এবং এরপরে বেড়ে গেছে রুটি ও তেলের দাম।
সুদানের সাংবাদিক জয়নব মোহাম্মদ সালিহ বিবিসিকে বলছেন, “সুদানে মানুষজন ব্যাংকের চেয়ে ম্যাট্টেসের নিচে টাকা জমাতে পছন্দ করছে।”
দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
গত শুক্রবার নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের ৩৪তম বার্ষিকীতে বিক্ষোভকারীরা সেনা সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই এটা প্রেসিডেন্ট বশিরের পদত্যাগের দাবির দিকে মোড় নেবে।
কারণ তার শাসন নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
দুর্নীতির সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭২ নম্বরে।
“সরকার প্রধান তেল খাত থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মিস্টার বশিরের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সামরিক বাহিনীর আনুগত্য
বিক্ষোভকারীরা আশা করছে, মিস্টার বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভকে সমর্থন দেবে সামরিক বাহিনী যেটি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ খুলে দেবে।
রবিবার নৌ ও বিমান বাহিনীর সৈন্যরা পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টার সময় বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করছেন।
গত তিনমাস সেনাবাহিনী কার্যত সাইড লাইনে বসে আছে।
নিয়মিত বাহিনী আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করছে এবং অনেককে আটকও করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ৫০ জনের বেশি মারা গিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে এ সংখ্যা বলা হচ্ছে ৩২।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যম সারির সেনা কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা এখনো সরকারের প্রতি অনুগত।
গত ফেব্রুয়ারিতে মিস্টার বশির কিছু সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে প্রভিন্সিয়াল গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং বছরব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছেন সারাদেশে।
তিনি স্বীকার করেছেন যে চলমান বিক্ষোভের কিছু যৌক্তিকতা রয়েছে কিন্তু বলেছেন প্রতিবাদকারীদের জয়ের জন্য ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন