আজহারুল ও কায়সারের আপিল শুনানি ঈদের পর
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের বিষয়ে শুনানির নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে।
আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হবে রমজান মাস। রোজার পর ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য ছুটির পর এ আপিল দুটির শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে।
দুই মামলার আপিল শুনানির জন্য আগামী ১৮ জুন দিন ঠিক করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেদিন কার্যতালিকার ১ নম্বরে এটিএম আজহারুল ইসলাম এবং ২ নম্বরে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার আপিল মামলা থাকবে।
‘আমরা দুটো একসঙ্গে দেখব, একটার পর একটা। সময় তো আট সপ্তাহের বেশিই দেয়া হলো, ১৮ জুন শুনানি। এ মামলাগুলো দেরি করা যাবে না, তাতে (কার্যতালিকার) নিচে চলে যায়,’- বলেন তিনি।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানির জন্য এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।
আদালতে আজ আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডেভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এম এস শাহজাহান ও শিশির মোহাম্মদ মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মো, মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণার পর ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আজহারুল ও কায়সারের আবেদন দুটি শুনানির জন্য ওঠে। তবে, কার্যতালিকার অনেক পেছনে থাকায় আবেদন দুটির ওপর শুনানি সম্ভব হয়নি।
তবে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বুধবারের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) উপরের দিকে ছিল।
আজহারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করে ২০১৪ সালে রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে। অন্যদিকে সৈয়দ কায়সারেরও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় তার পরের বছর।
আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা এবং সার্টিফাইট কপি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আপিল করার বিধান। নিয়ম অনুযায়ী তারা দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন। এরপর ২০১৭ সালের ১৩ অগাস্ট এই দুই জনের করা আপিলের আবেদনের সার সংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
ওই বছর ১০ অক্টেবর দুই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তা পিছিয়ে যায়। প্রায় দেড় বছর পর আজ বুধবার মামলা দুটি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় আদেশের জন্য আসে।
আজহারুল ইসলাম
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে ১ হাজার ২৫৬ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, এক নারীকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শত শত বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের মধ্যে ১ নম্বর বাদে বাকি পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়।
ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এ আপিল করেন। আপিলে খালাস চান তিনি। মোট ৯০ পৃষ্ঠার আপিলে খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়।
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার
মুক্তিযুদ্ধকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেন হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ২ নারীকে ধর্ষণ, ৫ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির আদেশ পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের অপরাধ দুটি প্রমাণিত হয়। পরের বছর ১৯ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফাঁসির সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেন তিনি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন