টিআইবির প্রতিবেদন ‘ঢালাও-স্ট্যান্টবাজি’
ঢাকা ওয়াসায় অনিয়ম রয়েছে, পানি সুপেয় নয় এবং সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ওয়াসা সম্পর্কে টিআইবির এই প্রতিবেদনকে ‘নিম্নমানের’, ‘ঢালাও’, ‘স্ট্যান্টবাজি’ বলে উল্লেখ করেছে ওয়াসা।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান।
তিনি বলেন, এটা প্রফেশনাল কোনো গবেষণার প্রতিবেদন নয়, এটা একটা রিপোর্টের মতো হয়েছে। এটা নিম্নমানের ও ঢালাও রিপোর্ট। রিপোর্টে টিআইবি নিজেদের পার্সপেক্টিভ উল্লেখ করেছে, এটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে ডাটা কালেক্ট করতে পারেনি। রিপোর্টে উল্লেখ করা ওয়াসার অনিয়মের অভিযোগটি ঢালাও।
এর আগে বুধবার টিআইবির পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়, সেবাগ্রহীতাদের ৮৬.২ ভাগ ওয়াসার কর্মচারী এবং ১৫.৮ ভাগ দালালকে ঘুষ দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে পানির সংযোগ গ্রহণে ২০০ থেকে ৩০০০০ টাকা, পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪৫০০ টাকা, গাড়িতে করে জরুরি পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, মিটার ক্রয়/পরিবর্তন করতে ১০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা মিটার রিডিং ও বিল-সংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ থেকে ৩০০০ টাকা এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার পানির নিম্নমানের কারণে ৯৩ শতাংশ গ্রাহক বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পানের উপযোগী করে। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে বা সেদ্ধ করে পান করে। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পানের উপযোগী করতে প্রতিবছর আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাসের অপচয় হয়।
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার নিম্নমান এবং সেবা সম্পর্কে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বেশি সেবাগ্রহীতা অসন্তুষ্ট। এছাড়া গ্রাহক সেবায় এলাকাভেদে সেবার মানের তারতম্য ও ন্যায্যতার ঘাটতি-চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি বস্তিবাসীর ক্ষেত্রে।
‘ঢাকা ওয়াসার নিম্নমানের পানির কারণে প্রতিবছর পানি ফুটাতে অপচয় ৩৩২ কোটি টাকা।’ টিআইবির গবেষণার এমন ফলাফলের বিষয়ে তাকসিম এ খান বলেন, এই তথ্য সম্পূর্ণ হাইপোথেটিক্যাল এবং বাস্তবতা বিবর্জিত। এটা একটা স্ট্যান্টবাজি। ঢাকায় বসবাসরত এক কোটি ৭২ লাখ লোক সবাই পানি ফুটিয়ে পান করেন না। ফুটানোর প্রয়োজনও পড়ে না। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি শতভাগ বিশুদ্ধ ও সুপেয়। তবে মাঝে মাঝে পুরনো পাইপলাইন ও বাসার ট্যাংকি ময়লা হওয়ার কারণে পানি দূষিত পাওয়া যায়। আমাদের ঢাকা ওয়াসা থেকে বাড়ির হাউজে পানি যাওয়ার আগ পর্যন্ত পানির শতভাগ সুপেয় থাকে। এছাড়া আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) সংশ্লিষ্ট সবার মানদণ্ড অনুযায়ী ল্যাবরেটরিতে পানি পরীক্ষা করে গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করি। এসব ল্যাবরেটরি টেস্টের ফলাফল আমার কাছে আছে। আমি বলতে পারি যে আমাদের পানি শতভাগ সুপেয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার বস্তির পানি সুপেয় নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, টিআইবি লিখেছে যে বস্তির পানি সুপেয় নয়, অথচ এটা লেখেনি যে বস্তিতে ঢাকা ওয়াসা বৈধভাবে পানি সরবরাহ করছে, যা ভারতের মুম্বাই-দিল্লিতেও করা সম্ভব হয়নি। সেখানকার বস্তিতে ইন্ডাইরেক সোর্স থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। আমরা সরাসরি বৈধ পানি সরবরাহ করছি। তাছাড়া টিআইবি কোনো ল্যাবরেটরি টেস্ট না করেও এ কথাগুলো বলেছে। টেস্ট করালে প্রতিবেদনে সেটার ফলাফল উল্লেখ করা থাকত। আমাদের বস্তির পানি আইসিডিডিআরবি এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের ল্যাব থেকে টেস্ট করা রয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে ‘ওয়াসায় সুশাসনের অভাব’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে সুশাসন বলতে টিআইবি কী বুঝিয়েছে? সুশাসনের সংজ্ঞা কী? তারা বলছে আমাদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমি বলতে চাই, ঢাকা ওয়াসার যদি সক্ষমতার অভাবে থাকতো তাহলে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, চাইনিজ ও জার্মানির মতো উন্নত দেশের ব্যাংকগুলো কি আমাদের ওপর বিনিয়োগ করতো? ঢাকা ওয়াসার ম্যানেজারিয়াল সক্ষমতা, টেকনিক্যাল সক্ষমতা ও ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সক্ষমতা রয়েছে। ওয়াসাকে নিয়ে এডিবিও একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের সঙ্গে টিআইবির প্রতিবেদনের কোনো মিলই নেই।
ওয়াসার দুর্নীতির বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তাকসিম বলেন, ঢাকা ওয়াসা দুর্নীতি থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। ওয়াসার সমস্ত জিনিস অটোমেশন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। শুধুমাত্র মিটার রিডিং করতে একজন মিটার রিডার বাসায় বাসায় যান। এটাকেও অটোমেশন করে ফেলব। ইতোমধ্যে আমরা পাইলট হিসেবে এ কাজ শুরু করেছি, সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। আর পানির সংযোগ এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। এতে অনিয়ম দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই।
টিআইবি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ৬১ শতাংশ গ্রাহক অভিযোগের নিষ্পত্তি হয় না। এর জবাবে তাকসিম বলেন, ঢাকা ওয়াসার একটি নিজস্ব কল সেন্টার রয়েছে ১৬১৬২। এখানে এ যাবতকালে মোট ১১৩৬৭টি অভিযোগ এসেছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা এ পর্যন্ত ১১২০৫টি সমস্যার নিষ্পত্তি করেছি যা ৯৭ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ। টিআইবি কাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, টিআইবির গবেষণাপত্রের ফলাফলের প্রচারণার ধরন কৌশল ও অ্যাপ্রচ দেখে এটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে, গবেষণার পারসেপশন ভিত্তিক মনগড়া তথ্য দিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। ঢাকা ওয়াসা এই প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন