বাংলাদেশে চীনা ভাষা ইদানিং কেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে বেড়ে গেছে চীনা ভাষা শিখতে আসা মানুষের সংখ্যা। সরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেমন এই ভাষার জনপ্রিয়তা পেয়েছে তেমনি চাহিদা বেশি থাকায় বেসরকারি উদ্যোগেও গড়ে তোলা হয়েছে এমন নানা ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে সান্ধ্যকালীন চীনা ভাষার ক্লাসে গিয়ে দেখা যায় কোন সিট খালি পড়ে নেই।
গত কয়েক বছরে চীনা বিভাগে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান বিভাগীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আফজাল হোসেন।
প্রতি ব্যাচেই এখানে ক্লাস করতে আসছেন বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।
কেউ এসেছেন স্কলারশিপ পাওয়ার আশায় আবার কেউবা অফিসের চীনা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা করতে।
ইউরোপ বা পশ্চিমের অন্য দেশগুলোয় ডিগ্রী অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় চীনে যাওয়াটাকেই সহজ বলে মনে হচ্ছে নৈরেতা মাহমুদ ফারিনের কাছে।
তিনি বলেন, “মাস্টার্সের জন্য আমি চীনে যেতে চাই। কারণ কানাডা ইউএসএ-তে পড়াশোনা অনেক কস্টলি।”
“আপনি যদি স্কলারশিপও পান তাও আপনার লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাবে। আর চীন অনেক ভাল স্কলারশিপ দিচ্ছে। আর দেশটা আমাদের কাছাকাছিও।”
অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তানজিলা ফাহিম শিখন এখানে এসেছেন তার চীনা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যেন সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সেজন্যে।
মিজ শিখন বলেন, “আমাদের ক্লায়েন্টদের বেশিরভাগ ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলে, তারা অন্য ভাষা তেমন একটা পারে না। তাই আমি এখান থেকে কিছু শিখতে পারলে তাদের সঙ্গে কথা বলাটা সহজ হবে।”
গত কয়েকদশকে চীন সারাবিশ্বের ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের একটি বড় অংশ দখল করে আছে দেশটি।
কিন্তু বেশিরভাগ চীনা ব্যবসায়ী ইংরেজির পরিবর্তে তাদের মাতৃভাষা ম্যান্ডারিনে কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
তাই এসব চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কারণেই মানুষ চীনা ভাষা শিখতে আসছে বলে জানান প্রশিক্ষক পাও ফে।
তিনি বলেন, “চীনের সঙ্গ এখন সবাই ব্যবসা করছে। তাছাড়া দেশ হিসেবে তারা দিন দিন উন্নতি করছে। চীনা ভাষা শিখলে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, চাকরি পাওয়া যায়। তাই এই ভাষা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখানো হয় এই চীনা ভাষা।
এছাড়া চাহিদা থাকায় বেসরকারি উদ্যোগেও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে চীনা ভাষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তার মধ্যে একটি বনানীর ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব।
অন্য আরও নানা ভাষার পাশাপাশি এখানে চীনা ভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। কেননা উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে, চাকরি বা ব্যবসার কাজে চীনা ভাষার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাসুদ এ খান।
“প্রথমত মানুষ ক্যারিয়ারের জন্য চীনা ভাষা শিখছে আর শিখছে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য। আজকাল অনেকেই দোভাষী হতে চান, এটারও এখন প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে।”
ইংরেজির ক্ষেত্রে যেমন আইএলটিএস তেমনি চীনা ভাষার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মান পরীক্ষাকে সংক্ষেপে ‘এইচএসকে’ বলা হয়।
এটি মূলত অন্য ভাষাভাষীদের জন্য চীনা ভাষায় দক্ষতা অর্জনের মানদণ্ড। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় পাশ করলে সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।
যা পরবর্তীতে চীন সরকারের বৃত্তি পেতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকরি এমনকি চীনা প্রতিনিধিদের দোভাষী হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয় বলে জানান চীনা ভাষার প্রভাষক জান্নাতুন নাহার।
“বাংলাদেশের সাথে চীনের যে আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক যে যোগাযোগ, সেটা আগের চাইতে অনেক বেড়ে গেছে। তাই এই ভাষাটা শেখার প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।”
“এছাড়া নানা সেক্টরে কাজেরও অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন কেউ শখের বসে শেখেন, কেউ ব্যবসায়িক কাজে, কেউ উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেয়ার জন্য আবার কেউ চীনা কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে শিখতে আসছেন।”
চীনা ভাষায় অনেক ধরণের বৈচিত্র্য রয়েছে। তবে সেখানকার সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা হল ম্যান্ডারিন। ৫০০০ বছরের বিবর্তনে এই ভাষাটি এখন আরও সহজবোধ্য হয়েছে।
তারপরও এই ভাষায় বলতে পড়তে ও লিখতে পারার দক্ষতা অর্জন ভীষণ কঠিন। প্রয়োজন সঠিক প্রশিক্ষণ এবং প্রচুর অনুশীলন।
তাই বেনামি প্রতিষ্ঠানে বা শুধু বই পড়ে বা অ্যাপের মাধ্যমে এই ভাষা শেখা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন