মোদি-অমিত শাহকে কি ভয় পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন?
ভারতের নির্বাচন কমিশন কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শাসক দল বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ খতিয়ে দেখতেও ভয় পাচ্ছে? ঠিক এই অভিযোগ নিয়েই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
কংগ্রেস বলছে, নির্বাচনি প্রচারে সময় এরা দুজনে বারবার দেশের সেনাবাহিনীর নাম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন- অথচ কমিশন সম্পূর্ণ নীরব থাকছে।
কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব জানিয়েছেন, তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই তারা সুপ্রিম কোর্টে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
আগামীকাল মঙ্গলবার এই আবেদনের শুনানি হবে এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সুপ্রিম কোর্ট যে এই মামলাটি গ্রহণ করেছে সেটাই একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা কিংবা ভারতীয় সেনার বীরত্বের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন, একই কাজ করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-ও।
বিরোধী কংগ্রেস বলছে তারা দুজনেই নির্বাচনি জনসভাগুলোতে তাদের ভাষণে ঘৃণা ও বিদ্বেষও ছড়াচ্ছেন। তাদের মতে এগুলো নির্বাচনি আচরণবিধির পরিষ্কার লঙ্ঘন- অথচ দেশের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন মোদি-অমিত শাহ জুটির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার সাহসই দেখাতে পারছে না।
সুপ্রিম কোর্টে পিটিশনটি যিনি দাখিল করেছেন সেই শিলচরের কংগ্রেস এমপি সুস্মিতা দেব বলছিলেন, “আমার আবেদন হল নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে।”
“আমরা যখন একটা অভিযোগ দায়ের করছি- কমিশনকে সেটা বিবেচনা করতে হবে, অভিযোগে সারবত্তা থাকলে ব্যবস্থা নেবেন- আর না-থাকলে খারিজ করে দেবেন।”
“অথচ অভিযোগ যখন মোদি-অমিত শাহর বিরুদ্ধে, কমিশন ঠিক সেটাই করছে- আর আমরা তার বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে গেছি। প্রশ্ন হল, অভিযুক্তরা প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি সভাপতি বলেই কি এই নীরবতা?”
নির্বাচন কমিশন ভারতের একটি স্বাধীন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান- কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কি তাদের কার্যকলাপে আদৌ হস্তক্ষেপ করতে পারে?
সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ মীরা ভাটিয়া বলছিলেন, এ ক্ষেত্রে কোনও সম্ভাবনাই কিন্তু খারিজ করা যায় না। ভাটিয়ার কথায়, “সুপ্রিম কোর্ট যদি মনে করে তাহলে তারা নির্বাচন কমিশনকে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতেই পারে। সচরাচর যদিও তারা কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করে না – আর নির্বাচন যখন চলছে তখন তো আরওই না।”
“বিচারাধীন এই মামলার মেরিট নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না, কিন্তু শীর্ষ আদালত যে এই আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন এবং এক কথায় খারিজ করেননি আমি বলব সেটাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।”
সুস্মিতা দেবও বলছিলেন, “গত মাসের ৯ ও ১৯ তারিখে নির্বাচন কমিশনেরই জারি করা পর পর দুটি সার্কুলারে পরিষ্কার বলা হয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোনও অভিযান বা কর্মসূচির কথা আপনি ভোটের প্রচারে উল্লেখ করতে পারবেন না।”
“অথচ যখন সেই নির্দেশ বারবার লঙ্ঘিত হচ্ছে আপনারা চুপ করে বসে আছেন- কমিশন তো নিজেরাই এখানে আইন ভাঙছে!”
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় বিজেপি যে জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ব্যবহার করতে চাইছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনও লুকোছাপা কখনওই ছিল না।
কিন্তু তাদের প্রচারের সেরা দুই তারকার বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগে বিজেপি কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া থেকে বিরতই থেকেছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন