নিজস্ব বাতাসে ছাতিমের ঘ্রাণ || নাজমীন মর্তুজা

(পূর্ব প্রকাশের পর….)
এছাড়া পারিপার্শ্বিক কিছুই কি নেই… ইন্দ্রিয়াতীত কিছু! কাঞ্চনপারের জলাভূমিতে কালিয়ান্তলা নিম্বর ঝাড়ে যে নীলচে শিখা লাফিয়ে উঠত, সবাই বলতো ভুতের লণ্ঠন। আলেয়ার ব্যাখ্যা তখনও আমি জানতাম না, জানতাম না জন্যই গা ছমছম করা আনন্দটা ভয়ের সঙ্গে মিশে থাকতো সংগোপনে। তা আমার হঠাৎ কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের মতো।

আমার জন্মসুত্রে হিন্দু অধ্যুসিত এলাকা বলে ১২ মাসে ১৩ পার্বণ আমরাও পালন করতাম, বহুরুপী, খোঁচাগর, মারা ঘুরানি, কবিগান, মেলা ধর্মীয় শোভা কতো কিছুই না আয়োজন হতো। বহুরুপী যখন আসতো জানতাম তারা অমন ইচ্ছা করেই বিটকেল সাজে তবুও আব্বার কোলে উঠে আঁকড়ে ধরে থাকতাম ভয়ে। তার মধ্যে আনন্দের শিহরণ মিশে থাকতো, তা আজ বেশ বুঝতে পারি। কখনো কখনো মৃদু ভয় বড়ই উপভোগ্য ছিল, অতি ভয় মারক। উত্তর বঙ্গে শীতের প্রকোপ বরাবরই বেশী, গ্রামের দিন মজুর থেকে অফিসের বস সবাই এই একটা সময়ে পুরো সাহেব সেজে স্যুট বুট লাগিয়ে বেড়ায়। এই শীতকে ঘিরে যতো আয়োজন পিঠা পায়েস মেলা তেমনি দান খয়রাত শীত বস্ত্র বিতরণ।

চৌধুরীদের বাগানের উল্টো দিকের এখনো অতীতের ফুটপাতের রুগ্ন গাছের সারি, ধুলট, মলিন, হাড় জিরজিরে চেহারা নিয়ে শীত বস্ত্রের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা বিক্রমপুর, রংপুর, নোয়াখালী মানুষদের মুখ দেখি। কুয়াশায় জুবুথুবু। কেউ তাদের লক্ষ্যও করতো না ভাল করে। শির শিরে হেমন্তের সন্ধ্যায় হঠাৎ তীব্র মাদকের গন্ধে চারদিকে তরংগ তুলে তারা জানান দিতো, তারা সেই বিস্মৃত ছাতিম…। (চলবে….)


নিজস্ব বাতাসে ছাতিমের ঘ্রাণ : ১ম পর্ব

নিজস্ব বাতাসে ছাতিমের ঘ্রাণ : ২য় পর্ব

নিজস্ব বাতাসে ছাতিমের ঘ্রাণ : ৩য় পর্ব