পাইপলাইনে তেল যাবে সারা দেশে
জ্বালানি তেল সরবরাহ সহজ ও যুগোপযোগী করতে পাইপলাইন ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার মনে করছে, এ মাধ্যমে তেল পরিবহনে ঝামেলা কমবে। কমবে ঝুঁকিও। এ জন্য সারা দেশে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে পর্যায়ক্রমে। এর মধ্যে ১২৫ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করে দেবে ভারত। পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হবে ভারত থেকে। এরই মধ্যে ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৮ মে) জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে সংশ্লিষ্ট সচিবের সভাপতিত্বে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. সামছুর রহমান বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে ভারত থেকে পাইপলাইনে তেল আনতে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এজন্য ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ৫ কিলোমিটার হবে ভারতে। বাকি ১২৫ কিলোমিটার হবে বাংলাদেশে। এজন্য প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর দেশজুড়ে তেলের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিতে সরকার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরবি) থেকে পরিশোধিত তেল আসবে শিলিগুড়িতে প্রতিষ্ঠানটির বিপণন টার্মিনালে। সেখান থেকে পাইপলাইনে বছরে ৮০ হাজার টন তেল আসবে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। এভাবে তিন বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার টন তেল সরবরাহ করবে নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড। তবে তেলের দাম অনির্ধারিত। সরবরাহ সময়ের আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে দর ঠিক করা হবে।
বিপিসি সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে সংস্থাটির আওতায় মেঘনা, যমুনা ও পদ্মা তেল বিপণন কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে ক্রড ও পরিশোধিত তেল সামুদ্রিক জাহাজ, নৌ-জাহাজ, ওয়াগন ট্রেন ও ট্যাংক লরিতে পরিবহন করা হয়। বিদেশ থেকে আমদানি থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত তেল সরবরাহে দীর্ঘকাল ধরে এ চার উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। কিন্তু এতে বিভিন্ন সময়ে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। রয়েছে ঝুঁকিও। স্থলপথে দেশে তেল পরিবহন করতে বিভিন্ন ঝক্কিতে পড়তে হয়। এছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগে তেল পরিবহন ব্যাহত হয়ে থাকে।
এ প্রেক্ষাপটে তেল পরিবহনে পাইপলাইন ব্যবহার করার ওপর গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে সরকার। এ জন্য আগামী তিন বছরে ৫টি বড় পাইপলাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোট ৬০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এ লাইনগুলো নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। দেশজুড়ে সহজে তেল পরিবহন ও খরচ কমাতে এ পাইপলাইনগুলো স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে বিদেশ থেকে তেল আমদানির খরচ এবং সিস্টেম লস কমাতে ‘ইন্দো-বাংলা মৈত্রী পাইপলাইন’ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভারতের প্রস্তাব মোতাবেক, পাইপলাইন হবে তিন ইঞ্চি ব্যাসার্ধের। এজন্য কারিগরি সহায়তা দেবে ভারত। ২০২০ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই ইন্দো-বাংলা পাইপলাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণ করা গেলে দেশের উত্তরাঞ্চলে তেল পরিবহন সহজ হবে। বছরে বিপুল পরিমাণ পরিবহন খরচ এবং তেলের সিস্টেম লস কমানো যাবে।
সূত্রমতে, দেশে বর্তমানে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। এর সিংহভাগ আমদানি করা হয়। সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে দেশে মোট ৮৬ লাখ ৩২ হাজার লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়েছে, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৪০ লাখ ৪৩ হাজার টন। ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে রিফাইনারি প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
বিপিসির এক কর্মকর্তা জানান, আলোচনার পর পাইপলাইনে ডিজেল আমদানির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দুপক্ষের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তবে দেশের অভ্যন্তরে লাইন নির্মাণে কারা কাজ করবে তা চূড়ান্ত হয়নি। প্রথম পর্যায়ের কাজ করছে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ অংশের ব্যয় নির্বাহ করা হবে ভারতীয় ঋণ সহায়তা থেকে।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুগান্তকারী পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। অতীতের সরকারগুলোর জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতার ভ্রান্তনীতি পরিবর্তন করে বর্তমান সরকার জ্বালানির বহুমুখীকরণের নীতি গ্রহণ করেছে।
সমুদ্র বিজয়ের ফলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের সুযোগ সৃষ্টিসহ ৭টি সমুদ্র ব্লকে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিসমূহ একক ও যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। মহেশখালীতে স্থাপিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৫০০ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক সরবরাহ ৩,২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০০৮ সালে ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন